গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় চলছে টানা বৃষ্টি। নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট এই বৃষ্টিপাতের কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় নগরবাসীকে প্রতিদিনের যাতায়াত পোহাতে হচ্ছে এক কঠিন সংগ্রামে। চলুন, জেনে নিই ঢাকার জলাবদ্ধতার বর্তমান অবস্থা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে।
বৃষ্টিতে ডুবলো ঢাকা: কোন এলাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ?
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফেসবুকভিত্তিক ‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ গ্রুপে ব্যবহারকারীরা শেয়ার করেছেন জলমগ্ন সড়কের ছবি ও ভিডিও। যেসব এলাকায় পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ:
বনানী, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ – প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
মিরপুর, কালশী, বসুন্ধরা – জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত।
নিউ মার্কেট, ফকিরাপুল, গ্রীন রোড – দোকানপাট ও ফুটপাথ পানিতে ডুবে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত।
যমুনা ফিউচার পার্ক, নিকুঞ্জ – জলজটের কারণে পথচারীদের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।
যানবাহন সংকট: বৃষ্টিতে বেড়েছে ভাড়া, কমেছে গাড়ির সংখ্যা
লাগাতার বৃষ্টির কারণে ঢাকায় যানবাহনের চাপ কমলেও বেড়েছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। বাস, রিকশা ও সিএনজির সংখ্যা কমে যাওয়ায় অফিসগামী মানুষদের ঘরে ফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক রিকশাচালক বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা নিয়ে পথচারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এক পথচারী বলেন, “সাধারণ দিনে ৫০ টাকা ভাড়া যেখানে, আজ ১৫০-২০০ টাকা চাচ্ছে রিকশাওয়ালারা। বৃষ্টির মধ্যে বিকল্পও নেই।”
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: কখন শেষ হবে এই দুর্যোগ?
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এটি বর্তমানে সাতক্ষীরা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য সতর্কতা:
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
জলাবদ্ধতা রোধে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান জানিয়েছেন, নিম্নচাপের কারণে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নাগরিকদের জন্য করণীয়:
অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়া।
জলাবদ্ধ রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় সতর্ক থাকা।
জরুরি যোগাযোগের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হটলাইনে যোগাযোগ করা।
উপসংহার: কবে স্বস্তি ফিরবে নগরবাসীর?
ঢাকার জলাবদ্ধতা কোনো নতুন সমস্যা নয়, কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও এটি নগরবাসীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আবহাওয়া উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ জরুরি।
আরও পড়ুন: সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ ও লুটপাট
আপনার এলাকায় কি জলাবদ্ধতার সমস্যা হয়েছে? কমেন্টে শেয়ার করুন আপনার অভিজ্ঞতা। সচেতন থাকুন, নিরাপদ থাকুন!