ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা—মুসলিম উম্মাহর জন্য আনন্দ ও ইবাদতের দুইটি মহিমান্বিত দিন। এই দিনগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হলো তাকবির পাঠ। কিন্তু কখন, কীভাবে এবং কেন এই তাকবির পড়বেন? চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
ঈদের তাকবির কখন পড়বেন?
১. ঈদুল ফিতরের তাকবির
ঈদুল ফিতরের তাকবির শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে শুরু হয় এবং ঈদের নামাজের ইমাম তাকবির বলার আগ পর্যন্ত পড়া সুন্নত। সাধারণত বাড়ি থেকে বের হয়ে ঈদগাহ পর্যন্ত তাকবির পাঠ করা হয়।
২. ঈদুল আজহার তাকবির
ঈদুল আজহার তাকবির ৯ জিলহজ ফজর থেকে শুরু হয়ে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত পড়তে হয়। অর্থাৎ, জিলহজের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার তাকবির বলা ওয়াজিব (হানাফি মাজহাব অনুযায়ী)।
তাকবির কীভাবে পড়বেন?
ঈদুল আজহার তাকবিরের নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে:
উচ্চারণ:
اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”
অর্থ:
“আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য।”
পড়ার নিয়ম:
জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়লে: নামাজ শেষে ইমাম ও মুক্তাদি সকলে মিলে একবার উচ্চস্বরে তাকবির পড়বেন।
একাকী নামাজ পড়লে: নামাজের পর নিঃস্তব্ধভাবে তাকবির পাঠ করবেন।
তাকবিরের ফজিলত ও তাৎপর্য
১. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা
তাকবির হলো তাকবিরে তাশরিক, যা আল্লাহর মহানতা ও একত্ববাদের ঘোষণা। এটি ঈদুল আজহার বিশেষ ইবাদতের অংশ।
২. নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত
হজরত আলী (রা.) বলেন,
“নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় তাকবির বলতেন এবং মানুষকে তা শিখিয়ে দিতেন।” (বায়হাকি)
৩. গুনাহ মাফের সুযোগ
তাকবির পাঠ ও ঈদের আমল গুনাহ মোচনের মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ঈদের রাত (লাইলাতুল ঈদ) ইবাদতে কাটাবে, তার হৃদয় সেই দিন মৃত হবে না যেদিন সকল হৃদয় মৃত হবে।” (ইবনে মাজাহ)
ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময়
ঈদের দিনে মুসলিমরা পরস্পরকে “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” (আল্লাহ আমাদের ও আপনার ভালো আমলগুলো কবুল করুন) বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এটি সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত।
সতর্কতা:
তাকবির ভুলে গেলে বা নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে না পারলে পরবর্তীতে কাজা পড়ার প্রয়োজন নেই।
ঈদুল ফিতরের তাকবির ঈদের নামাজ পর্যন্ত, আর ঈদুল আজহার তাকবির ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত পড়তে হবে।
মনে রাখবেন:
তাকবির শুধু একটি জিকির নয়, বরং এটি ঈদের রুহানিয়াতের অংশ। নিয়মিত তাকবির পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং ঈদের প্রকৃত বারাকাহ পেতে সক্ষম হব।
আরও পড়ুন: হজে গিয়ে ৫ বাংলাদেশির মৃত্যু: করণীয় ও সতর্কতা
ঈদ মোবারক!
তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম!