কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার খামারিরা প্রস্তুত করেছেন প্রায় ১১ হাজার ৫৪১টি গবাদিপশু। তবে বাজারে ক্রেতাসংখ্যা কম থাকায় গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন স্থানীয় খামারি ও কৃষকরা।
চাহিদার তুলনায় বেশি গবাদিপশু, দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার মিঠামইনে কোরবানির জন্য প্রয়োজন প্রায় ৯ হাজার ৫০০টি পশুর। কিন্তু প্রস্তুত রয়েছে তার চেয়ে বেশি—২ হাজার ৪১টি অতিরিক্ত গবাদিপশু। এর মধ্যে রয়েছে:
ষাঁড়: ২,৭৭২টি
বলদ: ২৫টি
গাভি: ৭২৬টি
মহিষ: ২০০টি
ছাগল: ৭,০৫৪টি
ভেড়া: ৭৭৪টি
খামারিরা জানিয়েছেন, বাজারে এক লাখ টাকার মধ্যে গরুর চাহিদা বেশি। কিন্তু বড় আকারের গরুগুলোর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম। এ কারণে গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।
গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও কম চাহিদা: খামারিদের দুশ্চিন্তা
হাওর অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দু-চারটি করে গরু পালন করা হয়। কিন্তু এবার গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে, বাজারে ক্রেতা কম থাকায় লাভের পরিমাণও অনিশ্চিত।
মিঠামইনের খামারি মুক্তার হোসেন গোলাপ বলেন,
“আমরা ছোট গরু ৮৫ হাজার, মাঝারি ১ লাখ ৩০ হাজার এবং বড় গরু ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রির আশা করছি। কিন্তু গত হাটে ক্রেতা কম ছিল। আশা করছি, ঈদের কয়েক দিন আগে বাজার চাঙ্গা হবে।”
প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ, ভেটেরিনারি টিমের তদারকি
মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম—এই তিন হাওর উপজেলায় মোট ২৪টি খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করা হয়। ক্ষতিকর হরমোন বা ওষুধ ব্যবহার না করতে খামারিদের নিয়মিত সচেতন করা হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে মোট ৬০টি পশুর হাট রয়েছে। এসব হাটে ৪০টি ভেটেরিনারি টিম কাজ করছে। শুধু মিঠামইনেই ৪টি টিম মাঠ পর্যায়ে তদারকি করছে।
পাইকারি ক্রেতাদের চাহিদা ও বাজার পরিস্থিতি
পাইকারি গরু ব্যবসায়ী আবদুল মিয়া বলেন,
“আমি এ পর্যন্ত ১১টি গরু কিনেছি। এখন সেগুলো ঢাকার গাবতলি হাটে নিয়ে যাব। আশা করছি, ঈদের আগে বাজারে চাহিদা বাড়বে।”
তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, ঈদের কয়েক দিন আগে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে পারে। এখনো অনেক ক্রেতা দাম কমার আশায় অপেক্ষা করছেন।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শ
মিঠামইন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হিজায়েল মাহমুদ বলেন,
“এবার আমাদের উপজেলায় চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত হয়েছে। খামারিরা যদি ন্যূনতম লাভে পশু বিক্রি করেন, তাহলে তাদের জন্য ভালো হবে। আমরা প্রতিটি হাটে ভেটেরিনারি টিম deployed করেছি, যাতে সুস্থ ও নিরাপদ পশু ক্রেতারা পেতে পারেন।”
শেষ কথা
কোরবানির বাজারে গরুর দাম ও চাহিদা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। খামারিরা আশা করছেন, ঈদের কয়েক দিন আগে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেলে তারা তাদের পশু ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারবেন। এদিকে, ক্রেতাদেরও উচিত নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সুস্থ ও প্রাকৃতিকভাবে লালিত পশু ক্রয় করা।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে অবিরাম বৃষ্টি: জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর দুর্ভোগ
আপনার কী মনে হয়? কোরবানির বাজারে এবার গরুর দাম কেমন হবে? নিচে কমেন্টে আপনার মতামত জানান।