অনুমান করে বলুন তো – পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ কার সাথে কার হবে? আমিই বলি। সবচেয়ে বড় যুদ্ধ পৃথিবীতে মুসলিমদের সাথে অমুসলিমদের হবে। বিভিন্ন ইতিহাস এবং ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন তথ্যানুযায়ী একথা নিশ্চিত। এছাড়া, বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে এটা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, মুসলিমদের সাথেই সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা হবে।
আমাদের চোখের সামনে মুসলিম অধ্যূষিত দেশ ফিলিস্তিন আজ শেষ হয়ে গেল। লাখ লাখ মানুষকে ইসরায়েল শুধু মনের ইচ্ছায় নৃশংসভাবে মেরে ফেলল। এতো এতো দেশ পৃথিবীতে অথচ কেউ-ই এগিয়ে আসলো না। কেউ বললো না যে, এটা অপরাধ। কতগুলো মুসলিম দেশ – কেউ এগিয়ে আসলো না। ফিলিস্তিনবাসীর জন্য এক আল্লাহ ছাড়া আর যেন কোন উপায় নেই। অথচ আজ যদি অমুসলিম কোন দেশে এরকম কোন কিছু হতো তাহলে অন্যান্য দেশ বসে থাকতো না। পুরোদমে একটা যুদ্ধ লেগে যেত।
সময়ের পরিক্রমায় মুসলিমদের সাথে অমুসলিমদের অনেক যুদ্ধ হয়েছে। যেমন:
ইসলামের প্রাথমিক যুগে:
বদরের যুদ্ধ (Battle of Badr) – ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ
মুসলমানদের প্রথম বড় যুদ্ধ কুরাইশদের (মক্কার অমুসলিম) বিরুদ্ধে।
ওহুদের যুদ্ধ (Battle of Uhud) – ৬২৫ খ্রিস্টাব্দ
মক্কার কুরাইশদের সাথে দ্বিতীয় যুদ্ধ।
খন্দকের যুদ্ধ (Battle of the Trench) – ৬২৭ খ্রিস্টাব্দ
মদীনাকে ঘিরে কুরাইশ ও অন্যান্য অমুসলিম গোত্রদের সম্মিলিত আক্রমণ।
খিলাফত ও উমাইয়া যুগে:
ইয়ারমুকের যুদ্ধ (Battle of Yarmouk) – ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দ
মুসলিম বাহিনী বনাম বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য (Eastern Roman Empire)।
সিরিয়া ও শাম অঞ্চলে বিজয়।
কাদিসিয়ার যুদ্ধ (Battle of Qadisiyyah) – ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ
মুসলিম বাহিনী বনাম পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্য।
ইরান বিজয়ের সূচনা।
তুর যুদ্ধ (Battle of Tours / Battle of Poitiers) – ৭৩২ খ্রিস্টাব্দ
মুসলিম উমাইয়া বাহিনী বনাম ফ্র্যাঙ্ক বাহিনী (চার্লস মার্টেল)।
ফ্রান্সে মুসলিমদের অগ্রগতি থেমে যায়।
ক্রুসেড যুদ্ধসমূহ (১১শ–১৩শ শতক):
প্রথম ক্রুসেড (First Crusade) – ১০৯৬–১০৯৯
খ্রিস্টান ইউরোপীয় বাহিনীর সাথে মুসলিমদের সংঘর্ষ, জেরুজালেম দখলের উদ্দেশ্যে।
হিটিনের যুদ্ধ (Battle of Hattin) – ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ
সালাহউদ্দিন আইউবী বনাম খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা।
মুসলিমদের জেরুজালেম পুনরুদ্ধার।
তৃতীয় ক্রুসেড (Third Crusade) – ১১৮৯–১১৯২
সালাহউদ্দিন আইউবী বনাম রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট সহ ইউরোপীয় রাজারা।
উপরের তথ্যগুলো আমি ইন্টারনেট থেকে নিয়েছি। তথ্যগুলোতে ভুল থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তো দেখুন, যতোবারই যুদ্ধ হয়েছে তন্মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই মুসলিম’রা বিজয়ী হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয় কথাটি একদম খাটি এবং সত্য। আজ পৃথিবীতে মুসলিমরা নিষ্পেষিত। যে আরব দেশকে বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশ মেনে চলতো, আদর্শ মনে করতো – সেই আরব দেশ আর আগের মতো নেই। তাদেরকে আর মুসলমানদের প্রধান শক্তি মনে করা হয় না। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে তারা ইসলাম থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। আমার এই কথা আর ৫ থেকে ১০ বছর পরে মিলিয়ে নিয়েন। দেখবেন, আরবে তখন নাইট পার্টি ড্যান্স চলবে, শির কেটে ফেলার আইনটাই হয়তো থাকবে না, সিনেমা হলের বাজিমাত ঘটবে, ইসলাম নিয়ে এতো কঠোর কোন আইন থাকবে না সহ আর ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমরা যদি আরবের সেই আদিযুগে ফিরে যাই অর্থাৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে তাহলে দেখুন আরবে কি হতো আসলে:
ধর্মীয় অবস্থা:
বহু দেবতা পূজা (মূর্তিপূজা) প্রচলিত ছিল। কাবা ঘরে ৩৬০টির মতো মূর্তি ছিল।
আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস ছিল, কিন্তু সাথে অনেক দেবদেবীকেও উপাস্য হিসেবে মানা হতো।
কিছু লোক (যেমন: হানিফরা) একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন, তবে তারা ছিল খুবই অল্পসংখ্যক।
সামাজিক অবস্থা:
নারীদের প্রতি চরম অবমাননা ছিল। কন্যাশিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো (সূরা তাকভীর ৮-৯)।
বহুবিবাহ প্রচলিত ছিল, কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই।
দাসপ্রথা ব্যাপক ছিল এবং তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হতো।
গোত্রভিত্তিক বিভাজন ও বিবাদ ছিল খুব সাধারণ, এবং একটানা যুদ্ধ-বিগ্রহ চলত।
নৈতিক ও আইনি অবস্থা:
জুলুম, খুন, লুটপাট এবং রক্তপাতে সমাজ ছিল পরিপূর্ণ।
শক্তিই ছিল ন্যায়ের মাপকাঠি। দুর্বলের কোনো অধিকার ছিল না।
প্রতিশোধ (রক্তের বদলে রক্ত) ছিল আইন।
মদ্যপান, জুয়া, যৌন অনাচার সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।
জ্ঞান ও শিক্ষা:
খুব অল্প মানুষই পড়তে-লিখতে জানত।
কোনো সংগঠিত শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল না।
কবিতা ও মুখস্থ বিদ্যা ছিল একমাত্র সাংস্কৃতিক গৌরবের বিষয়।
অর্থনৈতিক অবস্থা:
ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল মূল জীবিকা। মক্কা ছিল একটি বাণিজ্যকেন্দ্র।
সুদ ও ঠকবাজি ছিল বাণিজ্যে স্বাভাবিক ব্যাপার।
রাজনীতি:
কোনো কেন্দ্রীয় সরকার ছিল না।
বিভিন্ন গোত্র ছিল স্বশাসিত, এবং গোত্রনেতারা সিদ্ধান্ত নিত।
গোত্রসমূহের মধ্যে বারবার সংঘর্ষ হতো, যেমন “বাস ও খাজরাজ” গোত্রের যুদ্ধ।
তো উপরে যেসব বর্ণিত হয়েছে সেগুলো আমরা মোটামুটি সবাই জানি। সেই আরব হয়তো ভবিষ্যতে আগের মতো গরীব অবস্থায় থাকবে না কিন্তু সম্পদশালী হওয়ার পরেও সেখানে ধর্মীয় বিধিবিধান শিথিল হয়ে যাবে। ইসলাম ধর্মের কদর কমে যাবে। আমাদের প্রাণ প্রিয় মহানবী (সাঃ) ঐ দেশেই জন্মেছেন এবং শেষ পর্যন্ত সেখানেই শায়িত রয়েছেন। আমরা কখনোই চাই না, এই আরব আবার আগের মতো হয়ে যাক। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আবার আগের মতোই খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
উপরের এই আরব সম্পর্কিত প্রসঙ্গটা আনার কয়েকটি কারণ আছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারন হলো, মুসলিম দেশগুলোর সাথে (আরব বাদে) যদি অন্য কোন অমুসলিম দেশের যুদ্ধ লাগে তাহলে এই আরব শুরুতেই এগিয়ে আসবে না। শেষ পর্যন্ত আসবে কিনা সেটাও আমার সন্দেহ। অথচ আরব থাকবে অনেক শক্তিশালী। তারা এগিয়ে এজন্যই আসবে না যে, তারা অমুসলিমদের পক্ষপাতদৃষ্ট হবে। তারা অমুসলিমদের ত্রুটি খুঁজে পাবে না এবং মুসলিমদের (দেশসমূহের) ত্রুটি খুঁজে পাবে। এটাই হবে সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাই মুসলিমদের জন্য সামনের দিনগুলো খুবই কঠিনতর হয়ে উঠবে।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই বিভিন্ন সময় মুসলিমদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। অথচ সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করে সরকার চুপ করে থাকে। ওইখানে অনেক মুসলিম নির্যাতিত হলেও সেগুলো খবরে বা পত্রিকায় তেমন একটা আসে না। অথচ বাংলাদেশে যদি একজন হিন্দুর উপরও নির্যাতন হয় (উদাহরণস্বরূপ) সেটা নিয়ে অনেক কিছু হয়ে যায়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ আসা শুরু করে। এখানেই আসলে বৈষম্যটা। কেন এরকম হবে? আমাদের দেশে কোন হিন্দু নাগরিকের উপর যদি জুলুম করা হয় তাহলে এর দায়ভার পুরোটাই সরকারের নিতে হবে এবং সঠিক বিচার ও পদক্ষেপ নিতে হবে। আবার, ভারতে মুসলিমদের উপর এমন ঘটনা ঘটলে ভারত সরকারকেও এর দায়ভার নিতে হবে এবং সঠিক বিচার করতে হবে। কিন্তু এমন আসলে হয় না। বিশ্বের অন্যান্য জাতির কেন জানি মুসলিমদের প্রতি আলাদা একটা (পুরনো শত্রুতার মতো) ক্ষোভ আছে। সুযোগ পেলেই সবাই মুসলিমদের ক্ষতি করতে চায়।
আর এই কারণেই যুদ্ধটা হবে। পুরো পৃথিবীর সমগ্র ভিন্ন জাতির সাথে মুসলিমদের যেন একটা বিদ্বেষ রয়েছে। অথচ এই বিদ্বেষ কিন্তু মুসলিমরা তৈরী করেনি। ড. জাকির নায়েক ইসলামের দাওয়াত দিতেন। অনেক বিধর্মীরা তার বক্তব্য শুনে মুসলিম হয়ে যেত। ভারত থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হলো। কারন, এভাবে চলতে থাকলে অনেক মানুষ মুসলিম হয়ে যাবে। যাই হোক, ড. জাকির নায়েক এখনও তার দাওয়াতের কাজ ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুসলিমদের সততা, কাজ-কর্ম, ধর্ম সবকিছুই তো সঠিক। কিন্তু বিধর্মী’রা যা করে তার তো অনেক কিছুই বেঠিক। তাই মুসলিমদের তারা দেখতে পারে না। পৃথিবী প্রায় শেষ সময়ে চলে এসেছে। এখন প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে অমানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যা আমরা কখনো কল্পনাও করিনি। আবার, মুসলিমদেরও কিছু দোষ দেব। কারন, মুসলিমদের সাথে প্রধান যুদ্ধটা হওয়ার পেছনে মুসলিমদেরও কিছু দোষ নিহিত থাকবে। মুসলিমরা আজ একতাই বল বিশ্বাস করে না। অনেক ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে তারা। এক ছোট্ট এই বাংলাদেশেই কতোরকম হুজুর, কত রকম ওয়াজ যার কোন শেষ নেই। ওর ওইটা ভুল, ওইটা মানা যাবে না, ও দোযখে যাবে নিশ্চিত, কেউ কেউ বেহেস্তে চলে গিয়েছে, পীরের মাজার, পীর পূজা, মাজার পূজা কতো কি! আরে ভাই, ইসলাম ধর্ম তো একটাই। আর এখানে আছে মূলত সহিহ হাদিস আর আলকোরআন। এর বাইরে তো কিছু থাকার কথা না। এই দুটো বিশ্বাস আর মেনে চললেই তো জীবন সুন্দর। তাহলে তো আর কারও সাথে কারও তর্ক হয় না, ভেদাভেদ তৈরী হয় না। কিন্তু কতিপয় মুসলিমদের কারণে এটা অসম্ভব। তারা মূলত কোন্দল বাঁধানোকেই খুব বেশি পছন্দ করে।
আর এই অসমতা এখন দেশ থেকে দেশে পৌছে গেছে। পৃথিবীতে অনেকগুলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে। কিন্তু বিপদে কেউ কারও পাশে দাড়াচ্ছে না। জলজ্যান্ত ফিলিস্তিন চোখের সামনে শেষ হয়ে গেল। আর কি বলবো। একতা না থাকার কারণে বিধর্মী রাষ্ট্রগুলো যে যেমন ইচ্ছা মুসলিমদের নিষ্পেষিত করছে। ধ্বংস করছে। এভাবে যখন অনেকগুলো মুসলিম দেশের উপর একসাথে আক্রমণ আসবে তখনই শুরু হবে মহাযুদ্ধ। আর এই যুদ্ধ কেবল বিধর্মীদের সাথে মুসলিমদের হবে। আমি বলে রাখলাম, আপনারা বেঁচে থাকলে আমার এই কথা মিলিয়ে নিয়েন। সবার সুস্থতা কামনা করে শেষ করছি।