আধুনিক যুদ্ধবিমানের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও রহস্যময় নাম হলো বি-২ স্পিরিট। এটি শুধু একটি বিমান নয়, বরং প্রযুক্তি, কৌশল এবং সামরিক শক্তির এক অনন্য নিদর্শন। এই বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শক্তির অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত, যার মূল্য এতটাই বেশি যে একে “উড়ন্ত সোনার পাখি” বললেও ভুল হবে না।
কেন বি-২ স্পিরিট এত ব্যয়বহুল?
বি-২ স্পিরিট বিশ্বের সবচেয়ে দামি যুদ্ধবিমান। একটি বিমান তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৫,৭০০ কোটি টাকা! এই বিপুল ব্যয়ের পেছনে রয়েছে এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও গোপনীয়তা।
১. স্টিলথ প্রযুক্তি: রাডারের চোখে অদৃশ্য
বি-২-এর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর স্টিলথ ক্যাপাবিলিটি। বিমানটির ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যে এটি শত্রুর রাডারে ধরা পড়ে না। এর বিশেষ কোণযুক্ত গঠন এবং রাডার-শোষণকারী উপাদান ব্যবহারের ফলে এটি আকাশে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
২. জটিল নির্মাণ প্রক্রিয়া
এই বিমান তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় উচ্চমানের কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল এবং বিশেষ প্রযুক্তি। প্রতিটি বিমানের নির্মাণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত গোপনীয় এবং সময়সাপেক্ষ, যা এর খরচকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
৩. রক্ষণাবেক্ষণের বিশাল ব্যয়
শুধু নির্মাণই নয়, বি-২-এর রক্ষণাবেক্ষণও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্রতি ঘণ্টা উড্ডয়নে খরচ হয় ১,৩০,০০০ ডলার (প্রায় ১.৫ কোটি টাকা)! এর উচ্চ প্রযুক্তিগত সুবিধাগুলো বজায় রাখতে নিয়মিত বিশেষায়িত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হয়।
বি-২ স্পিরিটের অদ্বিতীয় সক্ষমতা
১. বিশ্বজুড়ে আঘাত হানার ক্ষমতা
বি-২ স্পিরিট ১২,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে এবং মাঝপথে জ্বালানি নেওয়ার জন্য এয়ার-টু-এয়ার রিফুয়েলিং সিস্টেম রয়েছে। এটি ৩৭ ঘণ্টা অবিরাম উড্ডয়ন করতে পারে, যা যেকোনো গোপন মিশনের জন্য আদর্শ।
২. পারমাণবিক ও কনভেনশনাল অস্ত্র বহনে সক্ষম
এই বিমানটি ১৮,০০০ কেজি পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
১৬টি পারমাণবিক বোমা
৮০টি JDAM (গাইডেড বোমা)
ক্রুজ মিসাইল
৩. অত্যন্ত নিখুঁত টার্গেট স্ট্রাইক
বি-২ এর স্যাটেলাইট-গাইডেড সিস্টেম এতটাই উন্নত যে এটি একই সময়ে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে।
বি-২ স্পিরিটের যুদ্ধে ব্যবহার
এই বিমানটি ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া এবং সিরিয়ার মতো যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। এর স্টিলথ ক্যাপাবিলিটির কারণে শত্রুপক্ষ বুঝতেই পারেনি কখন, কোথা থেকে আঘাত এসে পড়েছে!
ভবিষ্যতে বি-২-এর স্থান নেবে বি-২১ রাইডার
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে বি-২-এর চেয়ে আরও উন্নত বি-২১ রাইডার তৈরি করছে, যা হবে সস্তা, আরও শক্তিশালী এবং আরও গোপনীয়। তবে এখনও পর্যন্ত বি-২ স্পিরিটই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ও রহস্যময় বোমারু বিমান হিসেবে পরিচিত।
উপসংহার
বি-২ স্পিরিট শুধু একটি বিমান নয়, এটি আধুনিক সামরিক প্রযুক্তির এক জীবন্ত কিংবদন্তি। এর নির্মাণ ও পরিচালনা খরচ যতই উচ্চ হোক না কেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্মের স্টিলথ বিমান আসলেও বি-২-এর ইতিহাস চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন: অ্যান্ড্রয়েড ফোন: যা আমাদের অজানা
আপনার কী মনে হয়? এই ধরনের উচ্চপ্রযুক্তির সামরিক বিমান কি বিশ্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, নাকি নতুন সংঘাতের জন্ম দেয়? কমেন্টে জানান!