প্রিয় পাঠক,
৩৩ বছর। একটি দীর্ঘ সময়। এই সময়ে সংসার নামের মহাসাগরে ভেসে বহু উপলব্ধি জমা হয়েছে হৃদয়ে। একজন স্বামী ও পিতা হিসেবে যা শিখেছি, তা আজ আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। যারা সংসার শুরু করেছেন বা ভবিষ্যতে গড়ে তুলবেন, তাদের জন্য এই কথাগুলো হয়তো পথের দিশা হয়ে থাকবে।
সন্তানকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই আপনার প্রধান দায়িত্ব
আজকের সমাজে আদব-কায়দা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা ও ধর্মীয় চেতনা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এমন এক যুগে আপনার সন্তানকে সৎ, নীতিবান ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব একান্তভাবেই আপনার। রাষ্ট্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে পুরোপুরি ব্যর্থ।
সন্তানের চরিত্র গঠনে প্রথম শর্ত হলো সত্যবাদিতা। তারপর আসে মায়ের প্রতি সম্মান। একটি শিশু যখন দেখে তার বাবা মাকে সম্মান করছেন, তখন সে নিজেও শেখে কীভাবে অন্যদের মূল্য দিতে হয়।
স্ত্রীকে সম্মান করুন: সংসারের ভিত্তি হলো শ্রদ্ধা
আপনার স্ত্রী শুধু আপনার জীবনসঙ্গীই নন, তিনি আপনার সন্তানের মা, আপনার সংসারের কেন্দ্রবিন্দু। তাকে অবমূল্যায়ন করলে সংসারের ভিত্তিই নড়বড়ে হয়ে যায়। মনে রাখবেন, নারীরা আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল। তারা ভালবাসা ও সম্মান দিয়ে সবকিছু মেপে দেখে।
স্ত্রীর রাগকে উপেক্ষা করবেন না, বরং কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরুন।
তাকে অপমান বা অবহেলা করলে সন্তানের মনেও আপনার প্রতি শ্রদ্ধা কমে যাবে।
তিনি আপনার প্রতিপক্ষ নন, বরং আপনার সঙ্গী, আপনার শক্তি।
“স্ত্রীর কাছে হার মানা বড় জয়। কারণ, এতে জিতে যায় পুরো পরিবার।”
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ: সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার
ঝগড়া-বিবাদ, চিৎকার-চেঁচামেচি করে সংসারকে যেন নরক বানাবেন না। বাইরের জগৎই যথেষ্ট কঠিন, বাড়িটা যেন শান্তির নীড় হয়। সন্তানেরা যদি বাবা-মায়ের মধ্যে টানাপোড়েন দেখে, তাদের মনোজগতে স্থায়ী ক্ষতি হয়।
পরকীয়া: সংসার ধ্বংসের সবচেয়ে বড় কারণ
আজকের যুগে অসংখ্য সংসার ভাঙছে পরকীয়ার কারণে। এটি শুধু একজনকে নয়, পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। নিজের লালসাকে নিয়ন্ত্রণ করুন, নইলে জীবনের সব সুখ শেষ হয়ে যাবে।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বছরের দাম্পত্য জীবনে কখনো স্ত্রীর সাথে উচ্চস্বরে কথা বলিনি, তাকে অপমান করিনি। দু’একবার নীরব অভিমান ছাড়া কোনো বিবাদ স্পর্শ করেনি আমাদের সম্পর্ক। তিনি আমার দুই কন্যার মা, আমার জীবনের মুকুট। আল্লাহ আমাদের অপার শান্তি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: যেখানে সম্মান আছে কেবল সেখানেই ভালোবাসা আছে
পরিশেষে…
সংসার সুখী হয় শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও ধৈর্য্য দিয়ে। সন্তানকে সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন, স্ত্রীকে সম্মান দিন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখুন। এটাই সুখী জীবনের মূলমন্ত্র।
আপনার সংসার যেন হয় শান্তির oasis,
একজন অভিজ্ঞ স্বামী ও পিতার পক্ষ থেকে।
উৎস: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া (সামান্য পরিমার্জিত)