ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি ৫৮৪ শুক্রবার সকালে জরুরি অবতরণ করে। উড্ডয়নের পরপরই বিমানের ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়ায় ক্যাপ্টেন নিরাপত্তার খাতিরে ঢাকায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। পরে যাত্রীদের জন্য একটি বিকল্প ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়, যা সফলভাবে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়।
কী ঘটেছিল?
বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের এই বিমানটি সকাল ৮টা ৩৮ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। মাত্র ২১ মিনিট পর, প্রায় ২,৫০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছালে ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। ককপিট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সম্ভাব্য বার্ড স্ট্রাইক (পাখির সংঘর্ষ) এর কারণে এই ত্রুটি ঘটে।
ক্যাপ্টেন দ্রুত জরুরি অবতরণের অনুরোধ করলে, বিমানটি ৮টা ৫৯ মিনিটে নিরাপদে রানওয়ে স্পর্শ করে। বিমানে থাকা ১৫৪ জন যাত্রী ও ৭ ক্রু সদস্য কোনো রকম দুর্ঘটনা বা শারীরিক ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে অবতরণ করেন।
পাখির সংঘর্ষের প্রমাণ
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অবতরণের পর রানওয়ে পরিদর্শন করে, তবে সেখানে পাখি বা অন্য কোনো বস্তুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, বিমানের ইঞ্জিনের কাউলিংয়ে রক্তের দাগ দেখা যায়, যা ইঙ্গিত দেয় যে পাখির সংঘর্ষ হয়েছিল।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন, “ফ্লাইটটি টেকঅফের পরপরই বার্ড স্ট্রাইকের শিকার হয়। পরে বিমানটি নিরাপদে ফিরে আসে এবং ইঞ্জিনে পাখির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।”
যাত্রীদের জন্য বিকল্প ফ্লাইট
ঘটনার পর যাত্রীদের সুবিধার্থে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দ্রুত একটি বিকল্প ফ্লাইট (বিজি ৫৮৪) এর ব্যবস্থা করে। নতুন ফ্লাইটটি দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। সব যাত্রীই তাদের গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছান।
বার্ড স্ট্রাইক: একটি সাধারণ কিন্তু বিপজ্জনক ঘটনা
পাখির সংঘর্ষ বা বার্ড স্ট্রাইক বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচলের জন্য একটি বড় ঝুঁকি। প্রতি বছর হাজারো বিমান পাখির সংঘর্ষের শিকার হয়, যা কখনো কখনো বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিমানবন্দরগুলো সাধারণত পাখি তাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেমন:
আল্ট্রাসনিক ডিভাইস
পাখি তাড়ানোর বিশেষ কর্মী
রানওয়ে পরিষ্কার রাখা
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তবে মাঝে মাঝে পাখির উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় প্রশংসা
এই ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দ্রুত সাড়া দেওয়া এবং যাত্রীদের নিরাপদে বিকল্প ফ্লাইটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রশংসা কুড়িয়েছে। যাত্রীরা তাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত ও সুব্যবস্থাপনার জন্য এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
শেষ কথা
এই ঘটনা বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ও প্রস্তুতির গুরুত্বকে আরও তুলে ধরে। পাখির সংঘর্ষ একটি সাধারণ ঘটনা হলেও, এরপরও নিয়মিত রানওয়ে পরিদর্শন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এই ধরনের ঝুঁকি কমাতে পারে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দ্রুত প্রতিক্রিয়া যাত্রীদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার শিক্ষা দেয়।
যাত্রীদের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার—এটাই বিমান চলাচলের মূলমন্ত্র।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ইরানি নাগরিকদের গ্রেপ্তার: কী ঘটছে এবং কেন?