বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে এক বছরে প্রায় এক কোটি গ্রাহক কমেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক চাপের কারণে মোবাইল অপারেটরগুলো ধারাবাহিকভাবে গ্রাহক হারাচ্ছে। বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত সময়ে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হারিয়েছে বাংলালিংক।
মোবাইল গ্রাহক হ্রাসের চিত্র
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে দেশের মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৯৮.৬ লাখ কমেছে। অপারেটরভিত্তিক গ্রাহক হ্রাসের চিত্র নিম্নরূপ:
গ্রামীণফোন: ১৪.৪৪ লাখ গ্রাহক কমেছে
রবি আজিয়াটা: ৩১.৫০ লাখ গ্রাহক কমেছে
বাংলালিংক: ৬২.৫০ লাখ গ্রাহক কমেছে (সবচেয়ে বেশি)
টেলিটক: ২০ হাজার গ্রাহক কমেছে
বাংলালিংকের গ্রাহক হ্রাস: বিশ্লেষণ
২০২৪ সালের জুনে বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৪.৪৪ কোটি, যা ২০২৫ সালের মার্চে নেমে দাঁড়িয়েছে ৩.৮২ কোটিতে। অর্থাৎ, মাত্র ১০ মাসে অপারেটরটি হারিয়েছে ৬২.৫০ লাখ গ্রাহক।
অন্যান্য অপারেটরের অবস্থা
গ্রামীণফোন: ৮.৫৫ কোটি থেকে ৮.৪১ কোটিতে নেমেছে।
রবি আজিয়াটা: ৫.৯৫ কোটি থেকে ৫.৬৪ কোটিতে পৌঁছেছে।
টেলিটক: তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল, মাত্র ২০ হাজার গ্রাহক কমেছে।
গ্রাহক কমার কারণ কী?
বিভিন্ন অপারেটর ও বিশ্লেষকদের মতে, গ্রাহক হ্রাসের পেছনে নিম্নলিখিত কারণগুলো দায়ী:
১. অর্থনৈতিক চাপ ও মূল্যস্ফীতি
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মানুষ একাধিক সিম ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। উচ্চ ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক এবং সিম কর বৃদ্ধি (২০০ থেকে ৩০০ টাকা) গ্রাহকদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।
২. রাজনৈতিক অস্থিরতা
২০২৪ সালের শেষ দিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাবে অনেকেই সক্রিয় সিম ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মী ও সংগঠনের সিম নিষ্ক্রিয় হওয়ায় গ্রাহক সংখ্যা কমেছে।
৩. টেলিকম খাতে উচ্চ করের বোঝা
বাংলাদেশে স্পেকট্রামের মূল্য আঞ্চলিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি, যা সেবার মান ও সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে অপারেটরদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
৪. ডিজিটাল পেমেন্ট ও ওয়ালেটের প্রভাব
অনেক ব্যবহারকারী এখন একাধিক সিমের পরিবর্তে মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিস (বিকাশ, নগদ, রকেট) ব্যবহার করছেন, যা গ্রাহক সংখ্যা কমার একটি কারণ হতে পারে।
অপারেটরদের প্রতিক্রিয়া
বাংলালিংক জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সংকট ও করের বোঝা গ্রাহকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। তবে তারা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও ডিজিটাল সেবা উন্নয়নে কাজ করছে।
রবি এর মতে, সিমের দাম বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি গ্রাহক হ্রাসের মূল কারণ।
গ্রামীণফোন বলছে, উচ্চ কর ও মুদ্রাস্ফীতি গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা
বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে গ্রাহক হ্রাস的趋势 অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, অপারেটররা যদি সাশ্রয়ী প্যাকেজ ও নেটওয়ার্ক সুবিধা বাড়াতে পারে, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হতে পারে।
সরকার ও বিটিআরসির ভূমিকা
টেলিকম খাতকে স্থিতিশীল করতে সরকার ও বিটিআরসিকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারে:
কর ও ভ্যাট হ্রাস: সিম ও ইন্টারনেট সেবার উপর কর কমানো।
স্পেকট্রাম মূল্য পুনর্বিবেচনা: অপারেটরদের জন্য সাশ্রয়ী স্পেকট্রাম নীতি প্রণয়ন।
ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো: গ্রামীণ এলাকায় সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সুবিধা প্রসারিত করা।
উপসংহার
বাংলাদেশের টেলিকম খাত বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলালিংকসহ সব অপারেটরই গ্রাহক হ্রাসের সম্মুখীন। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরকারি নীতিসহায়তা এবং অপারেটরদের গুণগত সেবা নিশ্চিত করলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
আপনার কী মনে হয়? মোবাইল গ্রাহক কমার পেছনে মূল কারণ কী? নিচে কমেন্ট করে জানান!
আরও পড়ুন: ফেসবুক গ্রুপ বন্ধের রহস্য: ব্যবহারকারীদের ক্ষোভ ও অনলাইন পিটিশন