প্রাকৃতিক জলাশয়ে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু জানেন কি, এই মনোমুগ্ধকর ফুলটি আপনি সহজেই বাড়ির আঙিনায় চাষ করতে পারেন? শাপলা চাষ শুধু সৌন্দর্য বর্ধনই নয়, এটি একটি লাভজনক উদ্যোগও হতে পারে। আজকে আমরা জানবো, কীভাবে সহজ পদ্ধতিতে শাপলা চাষ করা যায়।
শাপলা চাষের প্রাথমিক ধারণা
শাপলা সাধারণত বর্ষাকালে প্রাকৃতিকভাবে জলাশয়ে জন্মায়। তবে এর বীজ বা মূল (রাইজোম) ব্যবহার করে আপনি বাড়িতে ছোট জলাধারে বা টবে চাষ করতে পারেন। এটি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা একবার লাগালে কয়েক বছর ধরে ফুল ও কন্দ দেয়।
শাপলা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
বীজ বা মূল সংগ্রহ – শাপলার বীজ বা মূল (রাইজোম) নার্সারি বা জলাশয় থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
জলাধার প্রস্তুত – টব, চৌবাচ্চা বা ছোট পুকুরের মতো জলাধার প্রয়োজন।
মাটি ও পানি – দোআঁশ বা পলি মাটি এবং পরিষ্কার পানি প্রয়োজন।
সার – জৈব সার (গোবর বা কম্পোস্ট) ব্যবহার করা যেতে পারে।
শাপলা চাষের ধাপসমূহ
১. স্থান নির্বাচন
শাপলা চাষের জন্য এমন স্থান বেছে নিন, যেখানে দিনে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা রোদ পড়ে। বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা বাগানের কোণায় একটি টব বা ছোট জলাধার তৈরি করতে পারেন।
২. জলাধার তৈরি
টব বা চৌবাচ্চা ব্যবহার করলে: কমপক্ষে ১-২ ফুট গভীরতার পাত্র নিন।
মাটি প্রস্তুত: পাত্রের নিচে ৬ ইঞ্চি পুরু দোআঁশ মাটি দিন এবং উপরে ১ ফুট পানি রাখুন।
জৈব সার মেশান: মাটির সাথে গোবর বা কম্পোস্ট সার মিশিয়ে নিন।
৩. চারা রোপণ বা বীজ বপন
শাপলার মূল (রাইজোম) বা বীজ মাটির মধ্যে রোপণ করুন।
বীজ ব্যবহার করলে আগে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
মূল রোপণের সময় খেয়াল রাখুন, যেন শিকড় ভালোভাবে মাটির সংস্পর্শে থাকে।
৪. পরিচর্যা
পানি ব্যবস্থাপনা: জলাধারে সবসময় পর্যাপ্ত পানি রাখুন। পানির স্তর যেন ৬-১২ ইঞ্চির মধ্যে থাকে।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ: জলাধারে অন্য উদ্ভিদ জন্মালে তা সরিয়ে ফেলুন।
সূর্যের তাপ থেকে সুরক্ষা: অতিরিক্ত রোদে পানি গরম হয়ে গেলে শাপলার পাতা পুড়ে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনে জলাধারের উপর ছায়ার ব্যবস্থা করুন।
৫. সার প্রয়োগ
প্রতি ২-৩ মাসে একবার অল্প পরিমাণে জৈব সার দিন। রাসায়নিক সারের চেয়ে গোবর বা ভার্মিকম্পোস্ট বেশি উপকারী।
ফুল ও ফলন সংগ্রহ
শাপলা সাধারণত রোপণের ৩-৪ মাস পর ফুল দিতে শুরু করে।
ফুল ফোটার পর সকালে সংগ্রহ করুন।
শাপলার কন্দ (নাইল) খাওয়া যায় এবং এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।
শাপলা চাষের সুবিধা
বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
কম খরচে চাষ করা যায়।
শাপলার কন্দ ও ফুল বাজারে বিক্রি করে আয় করা সম্ভব।
সতর্কতা
জলাধারে মশা না জন্মে তা নিশ্চিত করুন।
অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
শেষ কথা
শাপলা চাষ একটি সহজ ও লাভজনক উদ্যোগ। অল্প পরিশ্রমেই আপনি বাড়িতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি একটি অর্থকরী ফসল পেতে পারেন। আজই শুরু করুন শাপলা চাষ এবং প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যকে ঘরে তুলে আনুন!
আরও পড়ুন: ধান চাষিদের জন্য ২৪/৭ হেল্পলাইন: এখন কৃষকের সমস্যার সমাধান এক কল দূরে
আপনার চাষের অভিজ্ঞতা কমেন্টে শেয়ার করুন! 🚀