মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি এখনও শান্ত হয়নি। সম্প্রতি ইরানের তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুষদের প্রধান ইব্রাহিম মোত্তাকি একটি বিস্ফোরক দাবি করেছেন। তার মতে, আগামী ৭ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ইরানের ওপর নতুন করে হামলা চালাতে পারে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বর্তমান যুদ্ধবিরতি প্রকৃতপক্ষে শান্তির ইঙ্গিত নয়, বরং এটি পরবর্তী বড় হামলার প্রস্তুতির সময় হতে পারে।
এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে নতুন কোনো অপারেশনের পরিকল্পনা করছে।
ইরানের প্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা
ইরানের কর্মকর্তারা এই সম্ভাব্য হামলাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। ইরানের সামরিক প্রধান আবদুর রহিম মুসাভি এবং সাবেক ন্যাটো কর্মকর্তা ইউসুফ আলাবার্দাও সতর্ক করেছেন যে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করতে পারেন।
এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলো ইসরাইলকে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। তিনি দাবি করেছেন, ইরানের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো নিশ্চয়তা দিয়েছে যে তারা ইরানের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসনমূলক কার্যকলাপে সহায়তা করবে না।
ইরানের কঠোর আইন ও ফতোয়া
সম্প্রতি ইরানের পার্লামেন্ট একটি কঠোর আইন পাস করেছে, যেখানে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো শত্রু রাষ্ট্রকে সহায়তা করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া, স্টারলিংকের মতো অননুমোদিত ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারকারীদেরও শাস্তি দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, ইরানের শীর্ষ শিয়া ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে “আল্লাহর শত্রু” আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পারমাণবিক সংকট ও নির্মাণকাজ
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সাম্প্রতিক হামলার ক্ষয়ক্ষতি এখনও পুরোপুরি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। মার্কিন বাংকার বাস্টার বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ক্রেন, বুলডোজার ও খননযন্ত্রের কার্যক্রম দেখা গেছে।
ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি জাতিসংঘে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইরান কখনই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না। তিনি দাবি করেছেন, পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি দ্বারা অনুমোদিত।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও ট্রাম্পের বক্তব্য
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে আলোচনার কথা বললেও, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি ইরানের সঙ্গে কোনো কথোপকথন বা চুক্তি করতে আগ্রহী নন। তবে, তিনি সম্প্রতি ইরানের তেল নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
শেষ কথা: যুদ্ধের আশঙ্কা কতটা বাস্তব?
গত ১২ দিনের সংঘাতে ইরানে ৯৩৫ জন এবং ইসরাইলে ২৯ জন নিহত হয়েছেন। এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি হলেও, পরিস্থিতি যে কোনো মুহূর্তে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী সপ্তাহে নতুন করে হামলা হতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে এই উত্তেজনা বিশ্বব্যাপী শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সংঘাত নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করা।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত: মানবিক সংকট চরমে
আপনার মতামত জানান: ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে এই উত্তেজনার সমাধান কী হতে পারে? নিচে কমেন্ট করে শেয়ার করুন।