ভুক্তভোগীর জীবন দুর্বিষহ
কুমিল্লার মুরাদনগরে পাশবিক নির্যাতনের শিকার নারী ও তাঁর পরিবার এখন আর নিজ বাড়িতে নেই। ঘটনার পর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ভিড়, গণমাধ্যমের অনুসন্ধান, ইউটিউবারদের সাক্ষাৎকারের চাপে তাঁর জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি পুলিশের সহায়তায় দুই সন্তান নিয়ে অন্যত্র চলে যান। তাঁর মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও অজানা গন্তব্যে চলে গেছেন।
কী ঘটেছিল?
গত ২৬ জুন রাতে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ সময় স্থানীয় কিছু লোক ফজর আলীসহ নারীকেও মারধর করে। তাঁকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে, এবং ফজর আলীসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গণমাধ্যম ও ভিড়ের চাপে পালাতে বাধ্য
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিত নারী ও তাঁর পরিবার সোমবার রাতে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন ব্যক্তি, সাংবাদিক, ইউটিউবার, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের ভিড় তাঁদের বাড়িতে জমা হচ্ছিল। অনেকেই ভুক্তভোগীর মুখোমুখি সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন, যা তাঁর জন্য মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছিল।
এমনকি, কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী ভিডিওতে নারীর চেহারা প্রকাশ করে আরও বেশি সংকট তৈরি করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার জন্য পুলিশের সহায়তায় তিনি অন্যত্র সরে গেছেন।
রিমান্ড আবেদন ও নতুন গ্রেপ্তার
পুলিশ ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে। কুমিল্লার আদালত বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির তারিখ দিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন:
মোহাম্মদ আলী (সুমন)
রমজান আলী
মো. আরিফ
মো. অনিক
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, “আমরা আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছি, কিন্তু তারা পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
সমাজের ভূমিকা ও ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা
এই ঘটনায় সমাজের একটি বড় অংশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। অনেকেই সহানুভূতি দেখানোর নামে ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করেছেন। পুলিশ ও প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং আইনগত প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হবে।
শেষ কথা
এ ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগীর গোপনীয়তা ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের উচিত সংবেদনশীলতা বজায় রেখে সংবাদ প্রকাশ করা, যাতে ভুক্তভোগীকে আরও বেশি বিপদে না ফেলা হয়। আশা করা যায়, দোষীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
আরও পড়ুন: ভোলার তজুমদ্দিনে চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে মারধর ও স্ত্রীকে ধর্ষণ