ইউটিউব বর্তমানে শুধু একটি ভিডিও প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং এটি লাখ লাখ কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের আয়ের প্রধান উৎস। অনেকেই ইউটিউবকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন, নিয়মিত ভিডিও তৈরি করে আয় করছেন। তবে সম্প্রতি ইউটিউবের নতুন জেনারেটিভ এআই (Generative AI) প্রযুক্তি চালু করার কারণে ক্রিয়েটরদের মধ্যে আয় ও ভিউ কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইউটিউবের নতুন এআই সার্চ ফিচার কী?
ইউটিউব তার প্রিমিয়াম ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নতুন এআই-চালিত সার্চ ফিচার টেস্ট করছে। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা কোনো ভিডিওর থাম্বনেইল বা টাইটেলে ক্লিক করার আগেই এআই জেনারেটেড সারাংশ (Summary) দেখতে পাবেন। অর্থাৎ, ইউটিউব সার্চের ফলাফলে ভিডিওর মূল তথ্য সংক্ষেপে দেখাবে, যাতে ব্যবহারকারীরা পুরো ভিডিও না দেখেই দ্রুত উত্তর পেয়ে যান।
এই প্রযুক্তি অনেকটা গুগলের “এআই ওভারভিউ”-এর মতো, যেখানে সার্চ করলেই এআই ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিয়ে দেয়। ইউটিউবও একই পদ্ধতি অনুসরণ করছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক হলেও ক্রিয়েটরদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেন উদ্বেগ বাড়ছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে?
১. ভিউ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা
ইউটিউবের আয় মূলত ভিউ, এড ভিউ (Ad Views) এবং এনগেজমেন্ট (Engagement)-এর উপর নির্ভর করে। যদি ব্যবহারকারীরা এআই সার্চ থেকে সরাসরি উত্তর পেয়ে যান, তাহলে অনেকেই ভিডিওটি দেখার প্রয়োজন বোধ করবেন না। ফলে ভিডিওর ভিউ কমে যেতে পারে, যা সরাসরি ক্রিয়েটরদের আয়ের উপর প্রভাব ফেলবে।
২. এড রেভেনিউতে প্রভাব
ইউটিউব থেকে আয়ের প্রধান উৎস হলো এডসেন্স বিজ্ঞাপন। ভিডিওতে যত বেশি ভিউ এবং এড ইম্প্রেশন হবে, তত বেশি আয় হবে। কিন্তু এআই সার্মারি দেখে ব্যবহারকারীরা ভিডিও না দেখলে এড দেখার সুযোগ কমে যাবে, ফলে ক্রিয়েটরদের আয়ও কমবে।
৩. কমে যেতে পারে এনগেজমেন্ট
ভিডিওতে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং সাবস্ক্রাইব করার হারও এআই সার্চের কারণে কমতে পারে। কারণ, ব্যবহারকারীরা ভিডিও না দেখেই তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন, তাই তাদের এনগেজ করার সুযোগ কমে যাচ্ছে।
ইউটিউবের পদক্ষেপ ও ক্রিয়েটরদের করণীয়
ইউটিউব দাবি করছে, এই ফিচার শুধুমাত্র প্রিমিয়াম ব্যবহারকারীদের জন্য টেস্ট করা হচ্ছে এবং এটি ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করবে। তবে ক্রিয়েটররা যদি দেখেন যে তাদের ভিউ ও আয় কমছে, তাহলে তাদের কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করতে হবে।
ক্রিয়েটররা কী করতে পারেন?
দীর্ঘ ও গভীর কন্টেন্ট তৈরি: এমন ভিডিও তৈরি করুন, যেখানে শুধু তথ্য নয়, বরং বিশ্লেষণ, বাস্তব উদাহরণ এবং ইন্টারেক্টিভ কন্টেন্ট থাকবে, যা এআই সার্মারিতে পুরোপুরি কভার করা সম্ভব নয়।
এনগেজমেন্ট বাড়ানোর চেষ্টা: দর্শকদের সাথে ইন্টার্যাক্টিভ প্রশ্ন রাখুন, পোল ব্যবহার করুন বা ভিডিওতে এমন কন্টেন্ট দিন, যা শুধু সারাংশে ধরা পড়বে না।
অন্যান্য আয়ের উৎস তৈরি: ইউটিউবের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে স্পনসরশিপ, মার্চেন্ডাইজিং, প্যাট্রিয়ন বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে আয়ের বিকল্প পথ তৈরি করুন।
উপসংহার
ইউটিউবের নতুন এআই প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের জন্য সহজলভ্য তথ্য প্রদান করলেও এটি ক্রিয়েটরদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তবে যারা ইনোভেটিভ এবং উচ্চমানের কন্টেন্ট তৈরি করবেন, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি সুযোগও হতে পারে। ইউটিউব ক্রমাগত আপডেট হচ্ছে, তাই ক্রিয়েটরদেরও নিজেদের কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহক হ্রাস: বাংলালিংক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
আপনার কী মনে হয়? ইউটিউবের এই এআই ফিচার কি ভবিষ্যতে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে? নিচে কমেন্টে আপনার মতামত জানান!