ঢাকার দোহার উপজেলায় এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ (৬৫) ওরফে হারুন মাস্টার প্রাণ হারিয়েছেন। বুধবার সকালে নামাজ শেষে পদ্মা নদীর পাড়ে হাঁটার সময় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দলীয় কোন্দল ও বালু ব্যবসার দ্বন্দ্বকে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
সকাল ৬টার দিকে ধোয়াইর বাজারের কাছে পদ্মা নদীর বাঁধে হাঁটছিলেন হারুন মাস্টার। এ সময় পেছন থেকে দুটি মোটরসাইকেলে চড়ে ৫ জন সশস্ত্র যুবক এসে তাকে লক্ষ্য করে ৪ বার গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আক্রমণকারীরা তার শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কয়েকটি আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় হারুন মাস্টারের।
এক স্থানীয় ব্যবসায়ী তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে লোকজনকে খবর দেন। তাকে দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হারুন মাস্টার কে ছিলেন?
নিহত হারুন মাস্টার দোহারের নয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে দলীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন। পেশায় তিনি বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাত্র ১৭ দিন পর তিনি অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।
তার পরিবার ও সহকর্মীদের মতে, হারুন মাস্টার একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতা ছিলেন। স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন, যা নিয়ে তার সঙ্গে কিছু মহলের বিরোধ ছিল। এছাড়া, ইউপি নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাও ছিল বলে জানা গেছে।
বিএনপির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দাবি করেছেন, সরকারের সমর্থনপুষ্ট গোষ্ঠীই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকও এই ঘটনাকে “রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড” বলে উল্লেখ করে দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।
পুলিশের তদন্ত ও সন্দেহভাজন কারণ
দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান আলী জানান, হারুন মাস্টারের শরীরে ৪টি গুলি ও ৩টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে তদন্ত চালাচ্ছে।
হারুন মাস্টারের ছোট ভাই আব্দুল মান্নান দাবি করেছেন, “আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবছিলেন এবং বালু মাফিয়াদের অনিয়মের বিরোধিতা করেছিলেন।”
স্থানীয় কিছু সূত্রে জানা যায়, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলও এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকতে পারে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হারুন মাস্টারের ছেলের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিবাদও একটি কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিবারের আহাজারি ও ন্যায়বিচারের দাবি
হারুন মাস্টারের স্ত্রী নাহিদা পারভীন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সকালে নামাজ পড়ে ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরই শুনি তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
স্থানীয়রা ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হাসপাতালে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন এবং খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি তোলেন।
শেষ কথা
এই হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক সহিংসতা ও অপরাধী চক্রের উত্থানেরই ইঙ্গিত দেয়। প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা। হারুন মাস্টারের হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল কারণ যাই হোক না কেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে জরুরি।
আরও পড়ুন: বিয়ের মিথ্যা প্রলোভনে ধর্ষণ: এক তরুণীর মর্মান্তিক আত্মহত্যার গল্প
#বিএনপি #হারুন_মাস্টার #দোহার_হত্যাকাণ্ড #রাজনৈতিক_সহিংসতা #ন্যায়বিচার