ভয়াবহ ৪৮ ঘণ্টা: গাজার রক্তঝরা দিনগুলো
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার ২৬টি ভিন্ন স্থানে এই বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে, যার বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক জনগণের ওপর।
কোথায় কোথায় হামলা হয়েছে?
জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র: ৩৩ জন নিহত (খাদ্য সহায়তা নিতে আসা বেসামরিক নাগরিক)
আল-মাওয়াসি তাঁবু: ১৩ জন নিহত
মুস্তাফা হাফেজ স্কুল: ১১ জন নিহত (বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্র)
চিত্রণ: একটি মানবিক বিপর্যয়ের বাস্তব চিত্র
দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজযুমের বর্ণনা মতে, “ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের উপর হঠাৎ গুলিবর্ষণ শুরু হয়। চারদিকে শুধু আতঙ্ক, চিৎকার আর লাশের স্তূপ – একটি প্রকৃত নরকদৃশ্য।”
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হামলার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, আহতদের সাহায্য করতে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই পারেননি। এপির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরও ভয়াবহ তথ্য – জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোতে মোতায়েনকৃত নিরাপত্তাকর্মীরা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের উপর স্টান গ্রেনেড ও বুলেট ব্যবহার করছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা: প্রশ্নের মুখে মানবাধিকার
১৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, যার মধ্যে অক্সফাম ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও রয়েছে, তারা জিএইচএফ বন্ধের দাবি জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তাদের দাবি, এই সংস্থাটি ইসরায়েলের হাতে একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, যেখানে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের করুণ অবস্থা:
মোট নিহত: ৫৬,৬৪৭ (গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য)
মোট আহত: ১,৩৪,১০৫
গত মে থেকে জিএইচএফ কেন্দ্রে নিহত: ৬০০+
গত ৪৮ ঘণ্টায় নিহত: ৩০০+
ইসরায়েলের অবস্থান: নতুন বিতর্ক
ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের বক্তব্য আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে: “গাজায় খুব বেশি সাহায্য পাঠানো হচ্ছে। এর কোনোটিই ঢুকতে দেয়া উচিত নয়, কারণ তা আমাদের বিজয় বিলম্বিত করছে।”
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ:
১. কেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গণহত্যার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না?
২. জিএইচএফ এর মতো সংস্থাগুলো কি সত্যিই মানবিক সহায়তা দিচ্ছে, নাকি তারা সংঘাতের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে?
৩. কবে নাগাদ এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে?
শেষ কথা: মানবতার ডাক
গাজার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি শুধু একটি আঞ্চলিক সংঘাতের ইস্যু নয়, এটি সমগ্র মানবতার জন্য একটি কলঙ্ক। যখন স্কুল, হাসপাতাল, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো সেনা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়, তখন তা শুধু ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধেই নয়, সমগ্র সভ্যতার বিরুদ্ধেই অপরাধ।
“যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা আজ নীরব, কাল তা আমাদের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়াবে” – মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র
এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান কবে নাগাদ আসবে? বিশ্ব নেতারা কবে এই রক্তপাত বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন? এই প্রশ্নগুলো আজ সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইরানে আবারও হামলার আশঙ্কা: যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী?