খুলনায় এক মেলা আয়োজককে চাঁদা দাবির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই শীর্ষ নেতাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং এই কেলেঙ্কারির সূত্র ধরে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়, যেখানে সংগঠনের খুলনা মহানগরীর সদস্য সচিব জহুরুল ইসলাম তানভীর ও মুখ্য সংগঠক সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদকে মেলা আয়োজক প্রতিষ্ঠান “মন্টু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট”-এর মালিকের সাথে ফোনালাপে চাঁদা দাবি করতে শোনা যায়। অডিওতে আজাদ স্পষ্টভাবে বলেন,
“আমি এ থেকে জেড পর্যন্ত সবাইকে কন্ট্রোল করতে পারব। কেউ আপনার মেলায় বাধা দেবে না – শর্ত হলো আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে।”
আয়োজক পক্ষের প্রতিনিধি মন্টু রহমান অডিওটির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “এটি আমার সাথে তাদের কথোপকথনের রেকর্ড। তারা স্পষ্টভাবে টাকার দাবি করেছিল এবং আমি বাধ্য হয়েই তা দিয়েছি।”
সংগঠনের জরুরি সিদ্ধান্ত
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি জরুরি বৈঠকে বসে। সংগঠনের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে:
দু’জন নেতাকে তাত্ক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত
৩ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দাবি
অভিযোগ প্রমাণিত হলে স্থায়ী বহিষ্কার ও আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ইনামুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের সংগঠন দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি মেনে চলে। কেউ নিয়ম ভাঙলে কঠোর শাস্তি পাবে।”
শিক্ষাঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ফারহানা আক্তার বলেন,
“যারা শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা বলে, তারাই যখন চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ে, তখন সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিশ্বাসই হারিয়ে যায়।”
অন্যান্য অভিযোগ ও পূর্ববর্তী ঘটনা
খুলনা অঞ্চলে এটিই প্রথম এমন ঘটনা নয়। গত বছরের ডিসেম্বরে নৌপরিবহন খাত থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে এই সংগঠনের চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, “মাসে একবার করে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না দিলে ব্যবসা বন্ধের হুমকি দেওয়া হতো।”
আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা
যদিও এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক মামলা দায়ের করা হয়নি, তবে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আয়োজক প্রতিষ্ঠান যদি লিখিত অভিযোগ করে তবে তদন্ত শুরু করা হতে পারে। জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“এ ধরনের অভিযোগ খুবই সংবেদনশীল। প্রমাণ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সামাজিক মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। #ছাত্রনেতা_চাঁদাবাজি হ্যাশট্যাগটি ট্রেন্ড করছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন,
“এবার বুঝলাম, বৈষম্য দূর করার নামে আসলে কারা বৈষম্য তৈরি করছে!”
ভবিষ্যৎ কী?
এই ঘটনা ছাত্র রাজনীতির একটি বড় ধরনের সংকটের ইঙ্গিত দেয়। প্রশ্ন উঠছে:
ছাত্র সংগঠনগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
চাঁদাবাজির মতো অপরাধ রোধে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কতটা কার্যকর?
সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা ফিরে পেতে সংগঠনগুলো কী করতে পারে?
সমাপ্তি
এই কেলেঙ্কারি শুধু একটি সংগঠনের ভাবমূর্তিই নয়, সমগ্র ছাত্র রাজনীতির সততাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে জরুরি। পাশাপাশি, ছাত্র রাজনীতিতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের দাবি উঠছে সর্বস্তরে।
আরও পড়ুন: পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ধর্ষণ, ১ জন গ্রেফতার