একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড যা নাড়া দিয়েছে পুরান ঢাকাকে
পুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে জনসমক্ষে তাকে পিটিয়ে ও পাথর মেরে হত্যা করা হয়। ঘটনার ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এই হত্যাকাণ্ডকে “রোমহর্ষক ও নৃশংস” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “কোনো দুষ্কৃতকারীর অপরাধের দায় দল নেবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
বিএনপির অঙ্গসংগঠন থেকে ৪ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার
ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির তিনটি অঙ্গসংগঠন—যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল—চার নেতাকর্মীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কৃতরা হলেন:
রজ্জব আলী (পিন্টু) – যুবদলের কেন্দ্রীয় জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক (সাবেক)
সাবাহ করিম (লাকি) – ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক
অপু দাস – চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব
কালু (স্বেচ্ছাসেবক কালু) – স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বহিষ্কৃতদের কোনো অপকর্মের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না। সকল নেতা-কর্মীদেরকে তাদের সাথে কোনো প্রকার সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
পুরান ঢাকায় হত্যা’র পেছনে কারন
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। নিহত সোহাগের বোন কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সমাজ ও রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। অনেকে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আবার কেউ কেউ একে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হিসেবে দেখছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, “এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” তবে বিরোধীপক্ষের কিছু নেতা এই ঘটনাকে বিএনপির নেতৃত্বের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
পুলিশের উচ্চপদস্থ সূত্রে জানা গেছে, এই মামলায় তদন্ত দ্রুতগতিতে চলছে। ভিডিও ফুটেজ ও স্থানীয় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আরও গ্রেপ্তার হতে পারে। নিহতের পরিবার ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
শেষ কথা: অপরাধের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা
পুরান ঢাকার এই হত্যাকাণ্ড সমাজে অপরাধ ও সহিংসতার মাত্রা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তাদের সদস্যদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে কোনো অপরাধীই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে পার পেয়ে না যায়।
এই ঘটনার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে তা ভবিষ্যতে এমন নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সহায়ক হবে। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমেরও উচিত এমন ঘটনাগুলোতে সোচ্চার হয়ে ন্যায়বিচারের দাবি জোরালো করা।
আরও পড়ুন: ফেনীতে বন্যা সতর্কতা: মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত
#পুরানঢাকা #হত্যাকাণ্ড #বিএনপি #ন্যায়বিচার #অপরাধদমন