নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের এক ভয়াবহ ঘটনায় আওয়ামী লীগের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খেলার দ্বন্দ্ব চরম রূপ নেয়ার পর একদল সশস্ত্র হামলাকারী তাকে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।
ঘটনার বিস্তারিত
শুক্রবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় কালিয়া পৌরসভার কুলশুর গ্রামে বাবুপুর ও কুলশুরের মধ্যকার একটি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচ চলাকালীন উভয় পক্ষের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়, যা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের জেরে বাবুপুরের একদল যুবক কালিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান সরদারের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় নিহত জিল্লুর রহমান সরদার (৫৫) সেখানে উপস্থিত হয়ে হামলাকারীদের বাধা দেন। কিন্তু তারা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাঁ পায়ের রগ কেটে দেয় এবং নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে।
আহত অবস্থায় জিল্লুরকে প্রথমে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের তৎপরতা ও গ্রেপ্তার
ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন দুই যুবককে আটক করেছে। কালিয়া থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বাবুপুর গ্রামের রাতুল শেখ (২২) ও সজীব শেখ (২০)। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও সশস্ত্র হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার দাবি করছেন।
নিহতের পরিচয়
জিল্লুর রহমান সরদার কালিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কুলশুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী এবং পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান সরদারের চাচাতো ভাই ছিলেন। তার মৃত্যুতে পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, এই ধরনের সহিংসতা রোধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, খেলাধুলার মতো সামাজিক আয়োজন কীভাবে এতটা রক্তক্ষয়ী রূপ নিতে পারে?
শেষ কথা
খেলার মাঠে প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু তা যেন সহিংসতায় রূপ না নেয়, সে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। এই মর্মান্তিক ঘটনা সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তাই দেয়। আশা করা যায়, দোষীদের দ্রুত বিচার হবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: পুরান ঢাকায় হত্যা: বিএনপির অঙ্গসংগঠন থেকে ৪ নেতা বহিষ্কার