গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় রক্তপাত
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় অন্তত ১১০ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের ঘটনায় গাজার হাসপাতালগুলোতে লাশ ও আহতদের ভিড় তৈরি হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নৃশংস হামলা: ৩৪ জন নিহত
এই সংঘাতের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর ত্রাণকেন্দ্রে। ইসরায়েলি সেনাদের গুলিবর্ষণে সেখানে অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন ক্ষুধার্ত বেসামরিক নাগরিক, যারা খাদ্য ও জরুরি সহায়তার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। স্থানীয় সাক্ষীদের বর্ণনা অনুযায়ী, হঠাৎ গুলি শুরু হলে মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে প্রাণ হারান।
শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা: শিশু ও নারীদের মৃত্যু
এর আগে, আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালালে সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই শিবিরটি গাজার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর একটি, যেখানে হামাসের উপস্থিতি থাকলেও অধিকাংশ বাসিন্দাই নিরীহ বেসামরিক মানুষ। হামলায় বহু পরিবার সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এবং নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু ও নারী রয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের অভাবে অনেকের জীবন এখনও ঝুঁকিতে।
পটভূমি: ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাত
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ এর বেশি নাগরিক নিহত হন এবং কয়েকশত মানুষকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ৫৭,৮৮২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৩৮,০৯৫ জন আহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
এই সংঘাত নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। জাতিসংঘ বারবার যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানালেও ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু পশ্চিমা দেশ ইসরায়েলের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে, যা বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
গাজার বর্তমান মানবিক সংকট
খাদ্য ও পানির অভাব: গাজার ৯০% এর বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছেন।
চিকিৎসা ব্যবস্থা ধ্বংস: হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ ও ওষুধের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক মানুষ: গাজার প্রায় ৮০% জনগণ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
শেষ কথা
গাজায় চলমান এই সংঘাত কেবল একটি যুদ্ধই নয়, এটি মানবিক বিপর্যয়-এরও নামান্তর। বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্ব নেতাদের উচিত এই সংকট নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
আরও পড়ুন: পুরান ঢাকায় হত্যা: বিএনপির অঙ্গসংগঠন থেকে ৪ নেতা বহিষ্কার
#গাজা #ইসরায়েল_হামাস_যুদ্ধ #ফিলিস্তিন #মানবিক_সংকট #আন্তর্জাতিক_সম্প্রদায়
মন্তব্য করুন: আপনি এই সংঘাত সম্পর্কে কী মনে করেন? নিচে আপনার মতামত জানান।