সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনতার আওয়াজ
শনিবার রাজধানীজুড়ে বিক্ষোভে উত্তাল ছিল সাধারণ মানুষ। পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যার বিচার দাবি এবং সারাদেশে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন শত শত মানুষ। রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে সোচ্চার হন ন্যায়বিচারের দাবিতে।
সোহাগ হত্যাকাণ্ড: নৃশংসতার চিত্র
গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) কে তার নিজ দোকান থেকে জোর করে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হামলাকারীরা ইট, রড, কংক্রিট ও পাথর দিয়ে তাকে পিটিয়ে মারে। এমনকি মৃত্যু নিশ্চিত করতে তারা তার শরীরের ওপর লাফিয়েও পড়ে। এই নিষ্ঠুর ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা দেখে গোটা দেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়।
গ্রেপ্তার ও তদন্তের অগ্রগতি
এই মামলায় ইতিমধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানা পুলিশ ৩ জন এবং র্যাব ২ জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। মামলার ৯ নম্বর আসামি টিটন গাজীকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এখনও অনেক আসামি পলাতক রয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে তদন্ত চলছে।
রাজনৈতিক সংগঠনের জড়িত থাকার অভিযোগ
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসerveক দলের কিছু নেতাকর্মী জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করেছে। তবে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন, শুধু বহিষ্কার করেই দায়িত্ব শেষ করা যায় কি?
বিক্ষোভকারীদের দাবি
বিক্ষোভকারীরা সোহাগ হত্যার দ্রুত বিচার, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অবসান এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তাদের মূল দাবিগুলো হলো:
সোহাগ হত্যার দ্রুত বিচার – আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধ – ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ওপর চাঁদাবাজি ও হামলা বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা – পুলিশ ও প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
সামাজিক মাধ্যমেও প্রতিবাদের ঝড়
সোহাগ হত্যার ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। #JusticeForSohag, #StopExtortion ট্রেন্ড করছে টুইটার ও ফেসবুকে। নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলেছেন, “এভাবে প্রকাশ্যে কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলার সাহস কীভাবে পায় সন্ত্রাসীরা?”
শেষ কথা: ন্যায়বিচারই সমাধান
সোহাগ হত্যাকাণ্ড শুধু একটি মামলা নয়, এটি আমাদের সমাজে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের চিত্র। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা না গেলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সরকার, প্রশাসন ও সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে, যেন আর কেউ সোহাগের মতো নির্মম মৃত্যুবরণ না করে।
আরও পড়ুন: ইরানে কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে প্রকাশ্যে ফাঁসি
আমরা চাই ন্যায়বিচার, চাই শান্তির বাংলাদেশ।