মাগুরার নিষ্ঠুরতম অপরাধগুলোর মধ্যে একটি হলো ৮ বছর বয়সী আছিয়ার ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড। এই মামলায় প্রধান আসামি হিটু শেখ বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও, সাক্ষীরা তার বিরুদ্ধেই জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। গত ২৯ এপ্রিল, তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মোট ১৬ জন সাক্ষী আদালতে তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই মামলার ন্যায়বিচার কতটা নিশ্চিত হবে, তা এখন সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখার বিষয়।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
২০২৪ সালের ৬ মার্চ, আছিয়া তার বড় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে। সেদিন রাতেই সে ধর্ষণের শিকার হয়। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু ১৩ মার্চ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় আছিয়ার বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে। পুলিশের তদন্তে তার ভূমিকা স্পষ্ট হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে, আদালতে হাজির হয়ে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে চলেছেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ: কী বলছে সাক্ষীরা?
জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক এম জাহিদ হাসানের সামনে গত তিন দিন ধরে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এ পর্যন্ত ১৬ জন সাক্ষী তাদের বক্তব্য দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন:
রবিউল ইসলাম নয়ন (ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব)
হামিদা (আছিয়ার বড় বোন)
সাক্ষীরা প্রায় সবাই হিটু শেখের বিরুদ্ধেই জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা করে তাদের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছেন।
হিটু শেখের দাবি: “আমি নির্দোষ”
আদালতে হাজির হয়ে হিটু শেখ সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনার দিন আমি এবং আমার দুই ছেলে বাড়িতে ছিলাম না। সকালে আছিয়াকে সুস্থ অবস্থায় রেখে বাইরে গিয়েছিলাম। তখন আছিয়ার বোনই একা বাড়িতে ছিল। আমি যদি দোষী হই, তাহলে যে শাস্তি পাব, তা মাথা পেতে নেব।”
তবে, তার এই দাবির বিপরীতে তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্য তার বিরুদ্ধেই ইঙ্গিত করছে।
পরবর্তী কার্যক্রম
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় মোট ৩৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। আগামী দিনগুলোতে মাগুরা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাক্ষ্য দেবেন, যা মামলার গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সমাজের দায়িত্ব: শিশু সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার
শিশু ধর্ষণ ও হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ আমাদের সমাজের নিকৃষ্ট চেহারা উন্মোচন করে। আছিয়ার মতো অসংখ্য শিশু নিরাপত্তাহীনতায় বড় হচ্ছে। এই মামলার দ্রুত ও ন্যায্য সমাধান শিশু অধিকার রক্ষার দাবিদার।
কী করা উচিত?
আইনের কঠোর প্রয়োগ: ধর্ষণ ও শিশু হত্যার মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি করতে হবে।
সামাজিক সচেতনতা: শিশুদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।
মানসিকতা পরিবর্তন: ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিকে দোষারোপের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
উপসংহার
আছিয়ার মৃত্যু কোনো সাধারণ ঘটনা নয়—এটি আমাদের সমাজের অন্ধকার দিকের প্রতিচ্ছবি। এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এখন শুধু আইনের দায়িত্বই নয়, সামগ্রিক সমাজেরও নৈতিক কর্তব্য। আমরা আশা করি, বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হবে এবং আছিয়ার পরিবার কিছুটা হলেও ন্যায়বিচার পাবে।
আরও পড়ুন: আছিয়ার মৃত্যু হলো | ধর্ষক’রা এখনও জীবিত কেন?
#শিশু_সুরক্ষা #ন্যায়বিচার #আছিয়া_মামলা #ধর্ষণ_বিরোধী_আন্দোলন