ভোরের নিস্তব্ধতা ভেঙে এক মেয়ের সাহসী ফোনকল
“আমি বাবাকে খুন করেছি, আমাকে ধরে নিয়ে যান…”—এমন করুণ স্বরে ফোন করে সাহসী এক তরুণী জানিয়েছে তার বাবার মৃত্যুর খবর। কিন্তু এই খুনের পেছনে লুকিয়ে আছে চার বছরের নির্মম নির্যাতনের ইতিহাস। বৃহস্পতিবার ভোরে সাভারের মজিদপুর কাঠালবাগান এলাকা থেকে ৯৯৯-এ কল করে ২৩ বছর বয়সী জান্নাতুল জাহান শিফা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আব্দুস সাত্তার (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং শিফাকে গ্রেফতার করে।
কী ঘটেছিল সেই রাতে?
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিফা জানায়, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। বুধবার রাতে খাবারের সময় সে তার বাবার ভাতে ২০টি ঘুমের বড়ি মিশিয়ে দেয়। পরে ভোর রাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। খুনের পরই সে নিজেই পুলিশকে খবর দেয় এবং ঘটনার কথা স্বীকার করে।
চার বছর ধরে চলা নির্যাতনের ইতিহাস
শিফার বক্তব্য অনুযায়ী, তার বাবা তাকে চার বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছিল। ২০২২ সালে নাটোরের সিংড়া থানায় সে তার বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করলেও, কিছুদিন পর বাবা জামিনে মুক্তি পান। মুক্ত হওয়ার পরও তিনি তার অত্যাচার বন্ধ করেননি। বরং, বুধবার রাতে আবারও ধর্ষণের চেষ্টা করলে শিফা চরম প্রতিশোধ নেয়।
পুলিশের পদক্ষেপ ও চলমান তদন্ত
ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাভার মডেল থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং শিফাকে গ্রেফতার করে। থানার এসআই ইমরান হোসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিফার বক্তব্য নথিবদ্ধ করা হয়েছে এবং মামলাটি তদন্তাধীন।
সমাজের অন্ধকার দিক: পারিবারিক নির্যাতন ও আইনের ভূমিকা
এই ঘটনা আমাদের সমাজের একটি বড় অন্ধকার দিককে উন্মোচন করেছে। পরিবারের ভেতরেই যখন একজন মেয়ে নিরাপদ নয়, তখন তার আস্থা রাখার জায়গা কোথায়? শিফার ঘটনা শুধু একটি মেয়ের যন্ত্রণাই নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য একটি বড় প্রশ্ন—আমরা কতটা সচেতন? আইন কি সত্যিই নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ায়?
পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব
মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবারকেই সচেতন হতে হবে।
কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হলে অবশ্যই আইনি সহায়তা নিতে হবে।
সমাজে সচেতনতা বাড়াতে অভিভাবকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
আইন ও ন্যায়বিচার
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, শিফা যখন আগেই ধর্ষণের মামলা করেছিল, তখন কেন তার বাবাকে সম্পূর্ণভাবে শাস্তি দেওয়া হয়নি? আইনের ফাঁক গলে কি অপরাধীরা বারবার সুযোগ পাচ্ছে?
শেষ কথা
শিফার ঘটনা আমাদের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়। একটি মেয়ের আত্মরক্ষার লড়াই, চার বছরের নির্যাতন, এবং শেষ পর্যন্ত চরম প্রতিশোধ—এসব কি শুধু তার ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি? নাকি এটা আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি? এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে, যাতে কোনো মেয়েকেই আর এমন নির্মম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয়।
আরও পড়ুন: শামীম হাসান সরকারের বিরুদ্ধে অভিনেত্রীর অভিযোগ: বিতর্কের খতিয়ান
আপনার মতামত জানান:
আপনি কী মনে করেন এই ঘটনায় শিফার প্রতিক্রিয়া কি ন্যায্য ছিল? আইন কি যথেষ্ট শক্তিশালী নির্যাতিতদের রক্ষা করতে? কমেন্টে আপনার ভাবনা শেয়ার করুন।