জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলন তীব্রতর হয়েছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একটি বড় অংশ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে “কমপ্লিট শাটডাউন” ঘোষণা করেছেন। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম—ক্লাস বা পরীক্ষা—চালু থাকবে না।
আন্দোলনের কারণ ও মূল দাবিসমূহ
শিক্ষার্থীরা তিনটি মৌলিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন:
আবাসন সংকট সমাধান: বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত হোস্টেল সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
বৃত্তি প্রদান: বহুদিন ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষার্থীদের বৃত্তি অবিলম্বে পরিশোধ করা।
দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ ত্বরান্বিত করা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদনের দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়াও, গতকাল পুলিশের বাধা ও সহিংসতার প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও সরকারের নিষ্ক্রিয়তা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন বলেন, “সরকার আমাদের দাবিগুলো নিয়ে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার জন্য ডাক পাইনি। তাই ক্যাম্পাসে কোনো কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব, কিন্তু দাবি পূরণ না হলে ঘরে ফিরব না।”
যানজট ও পুলিশি বাধা
আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেওয়ায় পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, “শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে যমুনা ফিউচার পার্কের দিকের রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে, যার কারণে আশেপাশের এলাকায় মারাত্মক যানজট সৃষ্টি হয়েছে।”
গতকাল পুলিশের টিয়ার শেল ও লাঠিচার্জের ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আন্দোলনকারীরা এ ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা বছরের পর বছর ধরে হোস্টেল সংকটে ভুগছি। অনেকেই বাসা ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না। বৃত্তির টাকাও পাই না। এ অবস্থায় আমাদের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন।”
অন্য একজন শিক্ষক সমর্থক বলেন, “সরকার যদি এখনই আমাদের দাবিগুলো মেনে না নেয়, আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে।”
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি তাদের জোরালো অনুরোধ—দ্রুত সমস্যার সমাধান করে একাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।
শেষ কথা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলন শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নয়, এটি গোটা শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতারই প্রতিচ্ছবি। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কাম্য।
আরও পড়ুন: মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ
আপনার মতামত জানান: এই আন্দোলন সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন? নিচে কমেন্ট করে শেয়ার করুন।