যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন একটি দলের জন্ম দিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি, যার মূল লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান দ্বিদলীয় ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা। মাস্কের মতে, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টি নামে পরিচিত দুই প্রধান দল আসলে একটি ‘ইউনিপার্টি’ বা একক শাসন ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা জনগণের স্বার্থের বদলে নিজেদের স্বার্থে কাজ করছে।
ইলন মাস্ক কেন নতুন দল গঠন করছেন?
ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:
১. দ্বিদলীয় ব্যবস্থার সমালোচনা
মাস্কের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে আটকে গেছে, যেখানে দুটি দলই মূলত একই নীতিতে চলছে। তিনি একে ‘ইউনিপার্টি’ বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করেছেন যে এই ব্যবস্থা দুর্নীতি, অপচয় ও জনগণের স্বাধীনতা হরণ করছে।
২. ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধ
মাস্ক একসময় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করলেও বর্তমানে তাদের সম্পর্ক তিক্ত। বিশেষ করে, ট্রাম্প কর্তৃক ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ পাসের পর মাস্ক সরাসরি এর সমালোচনা করেছেন। এই বিলে কর ছাড় ও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা রয়েছে, যা মাস্কের মতে যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দেবে।
৩. রাজনৈতিক পরিবর্তনের ডাক
মাস্ক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে একটি তৃতীয় শক্তিশালী দলের প্রয়োজন, যা কংগ্রেসে ভারসাম্য বজায় রাখবে এবং দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। তিনি চান আমেরিকা পার্টি সিনেট ও হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখুক, যাতে বড় আইন পাসের ক্ষেত্রে তারা ‘সিদ্ধান্তমূলক ভোট’ দিতে পারে।
আমেরিকা পার্টির লক্ষ্য ও কৌশল
ইলন মাস্কের নতুন দলের কৌশল বেশ স্পষ্ট:
সিনেট ও হাউসে প্রভাব বৃদ্ধি: মাস্ক চান তাঁর দল সিনেটে ২-৩টি এবং হাউসে ৮-১০টি আসন জিতে, যাতে বড় আইন পাসের ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ: আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে আমেরিকা পার্টি কতটা সাফল্য পায়, তা দেখার বিষয় হবে।
ট্রাম্প-সমর্থিত আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে লড়াই: মাস্ক ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি ট্রাম্পের নীতিসমর্থনকারী প্রার্থীদের পরাজিত করতে অর্থ ব্যয় করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তৃতীয় দলের প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কখনোই প্রেসিডেন্ট জিততে পারেনি, কিন্তু তারা নির্বাচনের ফলাফল বদলে দিতে সক্ষম হয়েছে। যেমন, ১৯৯২ সালের নির্বাচনে রস পেরো নামের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রিপাবলিকান জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশের ভোট ভাগ করে দিয়েছিলেন, ফলে ডেমোক্র্যাট বিল ক্লিনটন জয়ী হন।
ইলন মাস্কের আমেরিকা পার্টি কি একই রকম প্রভাব ফেলবে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দল মূলত রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করতে পারে, যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।
সামনের দিনগুলো কী নিয়ে আসবে?
ইলন মাস্কের এই রাজনৈতিক উদ্যোগ সফল হবে কি না, তা নির্ভর করবে ভোটারদের সাড়া ও দলের সংগঠন শক্তির ওপর। তবে এক বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই—মাস্কের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লার নৃশংস হত্যাকাণ্ড: মা ও দুই সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রামে আতঙ্ক
আপনার কী মনে হয়? ইলন মাস্কের আমেরিকা পার্টি কি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারবে? নিচে কমেন্ট করে জানান!