ভোলা সদর উপজেলায় এক নারীর ওপর চরম নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে তারই প্রতিবেশী। সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে দুই সন্তানের সামনে মাকে হাত-পা বেঁধে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে কামাল মাঝি নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মধ্যরাতে রাজাপুর ইউনিয়নের কন্দকপুর গ্রামে।
ভুক্তভোগীর বেদনাদায়ক বর্ণনা
ভুক্তভোগী নারী জানান, তার স্বামী জেলে পেশায় সাগরে থাকায় তিনি দুই ছেলে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে একা ছিলেন। রাত দেড়টার দিকে কামাল মাঝি সিঁধ কেটে ঘরে প্রবেশ করে। চিৎকার দিলে সে ওড়না দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে এবং গলায় দা তুলে ধরে। এ সময় তার সঙ্গে আরও একজন অপরিচিত ব্যক্তি ছিল।
কামাল মাঝি তাকে মারধর করে এবং তার ছোট সন্তানের গলায়ও দা ধরে হুমকি দেয়। এরপর তাকে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ভুক্তভোগী আরও জানান, ধর্ষণের পর তাকে জোর করে একটি জবানবন্দি নেওয়া হয়, যাতে মনে হয় সে স্বেচ্ছায় কামালকে ঘরে ডেকেছে। তাকে হুমকি দেওয়া হয় যে, কাউকে ঘটনা জানালে ভিডিওটি ভাইরাল করে দেওয়া হবে এবং তার সন্তানদের হত্যা করা হবে।
চিকিৎসা ও পুলিশি তদন্ত
ঘটনার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তম জানান, ভুক্তভোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় মেডিকেল পরীক্ষা চলছে।
অন্যদিকে, ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে তদন্তে নেমেছে। তবে এখনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমাজে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
এ ধরনের ঘটনা সমাজে নারী নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে ধরে। প্রতিবেশীর হাতে এমন নৃশংস নির্যাতন শুধু একটি পরিবারকেই নয়, পুরো সমাজকে নাড়া দিয়েছে। ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা দাবি করছেন, অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি
ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, ভিডিও ধারণ ও ব্ল্যাকমেইলের মতো অপরাধও সমানভাবে গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত। আশা করা যায়, পুলিশ দ্রুততম সময়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
সচেতনতা ও প্রতিরোধ
এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় প্রশাসনের সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক সচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ একান্ত প্রয়োজন।
শেষ কথা
এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের সকলকে স্তম্ভিত করেছে। ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে জরুরি। আশা করি, অপরাধীরা শাস্তি পাবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: নৃশংস হত্যাকাণ্ড: স্ত্রীকে ১১ টুকরো করে হত্যা, স্বামী পলাতক
#নারীনিরাপত্তা #ধর্ষণেরবিরুদ্ধে_আইনি_কর্ম #ভোলা_ঘটনা #ন্যায়বিচার_চাই