মাদ্রাসা শিক্ষায় আধুনিকতার ছোঁয়া: ইসলামী ছাত্রশিবিরের যুগান্তকারী দাবি
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু এই শিক্ষা ধারাকে কি শুধু ধর্মীয় জ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত? নাকি আধুনিক যুগের চাহিদা অনুযায়ী এখানেও যোগ করতে হবে ব্যবসায় শিক্ষার মতো ব্যবহারিক বিষয়? সম্প্রতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আলিয়া মাদ্রাসায় “ব্যবসায় শিক্ষা” বিভাগ চালুর দাবি তুলে শিক্ষা নীতিতে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে।
মাদ্রাসা শিক্ষার ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
১৭৮০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলিম সমাজের শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও এটি মূলত ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়েই সীমাবদ্ধ। বর্তমানে আলিয়া মাদ্রাসায় মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগ থাকলেও ব্যবসায় শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর যৌক্তিকতা
শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য ব্যবসায় শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই বিভাগ চালু হলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের মতো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতে, “ব্যবসায় শিক্ষার মাধ্যমে ইসলামী নৈতিকতা ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটানো সম্ভব, যা সুদ, ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে।”
মাদ্রাসা শিক্ষায় বৈষম্য: বাজেট ও সুযোগ-সুবিধার অভাব
বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লক্ষ আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই শিক্ষা ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ বিকাশ লাভ করতে পারছে না। ২০২৪ সালের শিক্ষা বাজেটে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য মাত্র ১৩% বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এর ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা বা চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে।
শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয় ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
শিক্ষার সকল ধারাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নেওয়া জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও যদি আধুনিক ও ব্যবহারিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তাহলে তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের এই দাবি শুধু একটি বিভাগ চালুর দাবিই নয়, বরং মাদ্রাসা শিক্ষাকে বহুমুখী ও যুগোপযোগী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান
মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও গতিশীল ও কর্মমুখী করতে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর পাশাপাশি নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন:
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও ইন্টার্নশিপ সুবিধা বৃদ্ধি
আধুনিক ল্যাব ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও পাঠ্যসূচি হালনাগাদ
মাদ্রাসা শিক্ষাকে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির বাজারে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা
উপসংহার
আলিয়া মাদ্রাসায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু করা গেলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় মূল্যবোধের পাশাপাশি আধুনিক ব্যবসায়িক জ্ঞান অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত এই দাবি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
আরও পড়ুন: ডিগ্রিতে দেশ সেরা শামীমা – সন্তান কোলে নিয়েই এই সাফল্য!
#মাদ্রাসা_শিক্ষা #ব্যবসায়_শিক্ষা #শিক্ষা_সংস্কার #ইসলামী_ছাত্রশিবির #আলিয়া_মাদ্রাসা
মন্তব্য করুন: আপনার কী মনে হয়? মাদ্রাসায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু করা উচিত কি না? নিচে কমেন্টে মতামত দিন!