বর্তমান সময়ের একটি অস্বস্তিকর ও সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলো পাইলস, যাকে আমরা বাংলায় অর্শ রোগ বলি। এই রোগটি অনেক সময় ব্যক্তিগত জীবনে চরম অস্বস্তি ও দুর্ভোগ তৈরি করে। অথচ সচেতন জীবনযাপন ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানব—পাইলস কী, কেন হয়, এর লক্ষণ, কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন, কোন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়, চিকিৎসা না নিলে কী হতে পারে, এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়।
পাইলস বা অর্শ রোগ কী?
পাইলস হলো মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরের শিরাগুলোর ফোলাভাব বা স্ফীতি, যা অনেক সময় রক্তপাত, ব্যথা ও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি দুই ধরণের হতে পারে:
ইন্টারনাল পাইলস (Internal hemorrhoids) – মলদ্বারের ভেতরের অংশে হয়।
এক্সটারনাল পাইলস (External hemorrhoids) – মলদ্বারের বাইরের অংশে ফোলাভাব দেখা দেয়।
পাইলস কেন হয়?
পাইলস হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো:
দীর্ঘদিন ধরে কব্জ হওয়া (Constipation)
অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মল ত্যাগ করার অভ্যাস
অতিরিক্ত ওজন
গর্ভাবস্থা
দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে কাজ
ফাইবারবিহীন খাবার খাওয়া
বারবার ডায়রিয়া হওয়া
জেনেটিক কারণ (পরিবারে কারও থাকলে ঝুঁকি বেশি)
পাইলস রোগের লক্ষণসমূহ
পাইলস হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:
মলত্যাগের সময় বা পরে রক্ত পড়া
মলদ্বারে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া
মলদ্বারে চুলকানি
একধরনের গোটা বা ফোলা অংশ অনুভব করা
বসার সময় অস্বস্তি
কখনও কখনও মলদ্বার দিয়ে কিছু অংশ বেরিয়ে আসা, যাকে প্রোলাপ বলে
কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন?
পাইলস রোগ সাধারণত নিচের ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়:
৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা
গর্ভবতী নারী
অফিসে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা কর্মচারীরা
যাদের খাবারে আঁশ বা ফাইবারের ঘাটতি আছে
যারা কম পানি পান করেন
যাদের মলত্যাগের সময় দীর্ঘ সময় টয়লেটে বসে থাকার অভ্যাস আছে
পাইলস হলে কোন ডাক্তার দেখানো উচিত?
পাইলস রোগের চিকিৎসার জন্য জেনারেল ফিজিশিয়ান, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট, বা জেনারেল সার্জনের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়। কিন্তু জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী পাইলসের জন্য অপারেশন বা বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, যেটি একজন সার্জন করেন।
চিকিৎসা না নিলে কী হতে পারে?
পাইলস রোগকে অবহেলা করলে নিচের জটিলতা দেখা দিতে পারে:
স্থায়ী রক্তশূন্যতা (Anemia)
মলদ্বারে সংক্রমণ বা ইনফেকশন
থ্রোম্বোসিস (রক্ত জমাট বেঁধে তীব্র ব্যথা)
মলদ্বার দিয়ে মাংসপিণ্ড ঝুলে পড়া (Prolapsed Hemorrhoids)
নিয়মিত রক্তপাত ও দুর্বলতা
জীবনের মান ও কর্মক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া
পাইলস প্রতিরোধে জীবনযাপন কেমন হওয়া উচিত?
পাইলস থেকে বাঁচতে হলে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি:
ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া (সবজি, ফল, শস্য)
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা
নিয়মিত ব্যায়াম করা
মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া
দীর্ঘ সময় টয়লেটে বসে থাকা থেকে বিরত থাকা
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
অ্যালকোহল ও মসলাযুক্ত খাবার কম খাওয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া
পাইলস রোগ নিয়ে ভুল ধারণা
অনেকে পাইলসকে লজ্জার বিষয় মনে করেন এবং চিকিৎসা নিতে দেরি করেন। অথচ এই রোগটি খুব সাধারণ এবং চিকিৎসাযোগ্য। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
উপসংহার
পাইলস একটি অস্বস্তিকর হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
যদি উপরের লক্ষণগুলোর কোনটি আপনার সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্বাস্থ্যই সম্পদ—তাই নিজের যত্ন নিন, সচেতন হোন।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস রোগ হলে যা জানা দরকার ও মানা দরকার
দায়বদ্ধতা অস্বীকার (Disclaimer):
এই ব্লগ পোস্টটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা। এটি কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়। রোগের লক্ষণ থাকলে অবশ্যই যোগ্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।