ভিড় ও অবহেলায় হাসপাতালের করুণ দৃশ্য
সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার বিকেলে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় দুই প্রসূতি সন্তান প্রসব করেন। চিকিৎসক ও নার্সদের সহযোগিতা না পেয়ে পরিবার ও অন্য রোগীদের সহায়তায় তাঁরা সন্তানের জন্ম দেন। দুর্ভাগ্যবশত, এক নবজাতকের মৃত্যু হয়।
কী ঘটেছিল?
ঘটনার দিন সকালে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের চাটিবহর গ্রামের সুমি বেগম (১৯) এবং গোলাপগঞ্জের দক্ষিণ রামপাশা গ্রামের সুপ্রিতা রানী দাস (২৫) প্রসবের লক্ষণ দেখা দেওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু হাসপাতালে শয্যার অভাবে তাঁদের বারান্দায় রাখা হয়।
সুমি বেগমের মা রাজিয়া বেগম জানান, তাঁর মেয়ের প্রসববেদনা শুরু হলে বারান্দায়ই অন্যদের সহায়তায় সন্তান প্রসব করতে হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, সময়ের আগে জন্ম নেওয়া নবজাতকটি বাঁচানো যায়নি। প্রায় ১০ মিনিট পর সুপ্রিতা রানী দাসও একই অবস্থার মুখোমুখি হন এবং বারান্দায়ই সন্তান প্রসব করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা
হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, হাসপাতালের ধারণক্ষমতা মাত্র ৯০০ শয্যা, কিন্তু বর্তমানে প্রায় ২,৮০০ রোগী চিকিৎসাধীন। প্রসূতি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ২৫-৩০ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন, কিন্তু শয্যা সীমিত।
তিনি দাবি করেন, ভিড়ের কারণে প্রসূতিরা জরুরি অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকদের জানাতে পারেননি। তবে, নবজাতকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে সময়ের আগে জন্মগ্রহণকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “মায়েরা এখন সুস্থ আছেন, শীঘ্রই তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হবে।”
জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র
এই ঘটনা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা ফুটিয়ে তুলেছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভিড়, শয্যা সংকট এবং চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন সেবার ক্ষেত্রে অবহেলা প্রায়ই নবজাতক ও মায়েদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে।
কী করা উচিত?
১. হাসপাতালের ধারণক্ষমতা বাড়ানো: অতিরিক্ত শয্যা ও জরুরি প্রসূতি ইউনিট তৈরি করা প্রয়োজন।
২. চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধি: পর্যাপ্ত স্টাফ না থাকায় রোগীরা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না।
৩. জরুরি প্রটোকল মেনে চলা: প্রসূতি ওয়ার্ডে জরুরি রোগীদের দ্রুত চিহ্নিত করে চিকিৎসা দেওয়া উচিত।
৪. জনসচেতনতা বাড়ানো: প্রসবের আগেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
শেষ কথা
এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। স্বাস্থ্য খাতে আরও বিনিয়োগ ও উন্নয়ন প্রয়োজন, যাতে কোনো মা বা নবজাতককে বারান্দায় জন্ম নিতে না হয়। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এমন করুণ দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
আরও পড়ুন: দোহারে বিএনপি নেতা হারুন মাস্টার নৃশংস হত্যাকাণ্ড: নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নাকি ব্যবসায়িক সংঘাত?
আপনার কী মতামত? নিচে কমেন্ট করে জানান, কিভাবে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করা যায়।