উত্তরা — রাজধানী ঢাকার একটি পরিচিত ও গর্বের শহর। একে কেউ কেউ বলেন দ্বিতীয় রাজধানী। এই উত্তরার খুব কাছেই, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দক্ষিণখান। যদিও প্রশাসনিক দিক থেকে এটি ঢাকার অংশ, তবে নাগরিক সুবিধা ও অবকাঠামোগত দিক থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে।
আমি ২০২১ সালের শেষের দিকে দক্ষিণখানে আসি। তখনকার অভিজ্ঞতা আজও ভুলতে পারি না। রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা, বিশেষ করে বর্ষাকালে, ছিল এক কথায় ভয়াবহ। হাঁটাচলা তো দূরের কথা, মানুষ ঘর থেকেও বের হতে পারত না। নিচতলায় যারা থাকতেন, তারা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হতেন। অনেকের ঘরেই পানি ঢুকে যেত। আমি নিজেও নিচতলায় থাকতাম। ভাগ্য ভালো — পানি ঢোকেনি, তবে ছুঁই ছুঁই করেছিল। নিঃসন্দেহে, এটা আল্লাহর রহমত ছিল।
দক্ষিণখানের মেইন রোডের দুই পাশে সারি সারি দোকান। এই দোকানগুলোর অনেকেই নিজেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য রাস্তার ধারে বসতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, মূল বাজারটা খুবই ছোট — দক্ষিণখান বাজারে জায়গার অভাব প্রকট। শুক্রবারের দিন হলে সেই বাজারে প্রবেশ করাটাই হয়ে পড়ে এক চরম চ্যালেঞ্জ। অতিরিক্ত ভিড়, হিজিবিজি অবস্থা, বিশৃঙ্খল যানবাহন সবকিছু মিলিয়ে পরিবেশ মোটেও স্বাস্থ্যকর বলা যায় না।
যাতায়াত সমস্যা
উত্তরা যেতে হলে কসাইবাড়ি রেলগেট পার হতে হয়। আগে যেমন ছিল, এখনও ঠিক তেমনই আছে — ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয় শুধু রেলগেট পেরোনোর জন্য। গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু রাস্তার প্রশস্ততা অপরিবর্তিত। ফলে যানজট লেগেই থাকে। একইভাবে, দক্ষিণখান বাজারের মূল রাস্তা পার হতেই কোনো সময় ১০ মিনিট লেগে যায়। সড়কের দু’পাশে দোকান, চলমান রিকশা-অটো, ছোটখাটো যানবাহন — সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের হেঁটে চলাও কষ্টকর।
ফুটপাত নেই বললেই চলে। যেখানে থাকার কথা পথচারীদের জায়গা, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে দোকানের মালামাল কিংবা পার্ক করা অটো। হঠাৎ কোনো দিক থেকে মোটরসাইকেল এসে ধাক্কা দিয়ে দেবে — এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। নিরাপত্তাহীনতা আর বিশৃঙ্খলা যেন এখানকার নিত্যসঙ্গী।
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
এই এলাকার মানুষ স্বপ্ন দেখে — দক্ষিণখান একদিন উত্তরার মতোই উন্নত হবে। রাস্তা হবে প্রশস্ত, ফুটপাত থাকবে পথচারীদের জন্য, বাজার হবে পরিপাটি, আর বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগে পড়তে হবে না কাউকে।
সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে আমরা চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন। দক্ষিণখান এমন একটি জনপদ, যেখানে কর্মজীবী মধ্যবিত্তের বসবাস। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন মানেই একটি দেশের শহুরে জীবনের সার্বিক উন্নয়ন।
শেষ কথা:
দক্ষিণখান আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জীবনের গল্পের এক বিশাল অংশ। কিছু সমস্যা থাকলেও এখানকার মানুষ পরিশ্রমী, স্বপ্নবান। এই জায়গা একদিন উন্নয়নের রোল মডেল হবে — এই আশাতেই আমরা পথচলা অব্যাহত রেখেছি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের হামলা সত্ত্বেও ইরানের পরমাণু স্থাপনা অক্ষত: তেহরানের দাবি