ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলায় এক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও জোরপূর্বক গর্ভপাতের ঘটনায় স্থানীয় কৃষকদল নেতার ছেলেসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং নারী নির্যাতন ও আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীর বক্তব্য অনুযায়ী, নাজমুল খন্দকার নামের এক যুবক প্রায় দুই বছর ধরে ওই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। নাজমুল শৈলকূপা উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব কামরুল ইসলামের ছেলে। বিয়ের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তিনি নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
সময়ের ব্যবধানে নারীটি গর্ভবতী হলে নাজমুল ও তার পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা নারীটিকে ঝিনাইদহ শহরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাত করান। আরও মর্মান্তিক বিষয় হলো, চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগেই তাকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যান অভিযুক্তরা।
ভুক্তভোগীর বক্তব্য
নির্যাতিত নারী জানান, নাজমুলের পরিবার প্রথমে তাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছিল এবং তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু গর্ভধারণের পর তারা তাদের অবস্থান বদলে ফেলে। তিনি বলেন, “নাজমুল ও তার পরিবার আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। তারা জোর করে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করেছে এবং এখন আমাকে হুমকি দিচ্ছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রথমে শৈলকূপা থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। নাজমুলের বাবা কামরুল ইসলাম রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।
অভিযুক্তদের প্রতিক্রিয়া
নাজমুল খন্দকার ঘটনাটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেছেন, “এই নারী একজন প্রতারক। তার অভিযোগ মিথ্যা। আমি থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, তাও জানি না।”
অন্যদিকে, নাজমুলের বাবা কামরুল ইসলাম বলেন, “আমি এই নারী সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। সে আমার বাড়িতে আসত, কিন্তু গর্ভপাত বা হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।” তবে তিনি সাংবাদিকদের এই খবরটি এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন, যা অনেকের কাছেই সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
পুলিশ ও আইনি পদক্ষেপ
শৈলকূপা থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সম্রাট মন্ডল জানান, ভুক্তভোগীর অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, “আমরা ঘটনাটি তদন্ত করেছি এবং আদালতের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”
ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ, জোরপূর্বক গর্ভপাত ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সমাজ ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন
এই ঘটনা নারী নির্যাতন, প্রভাবশালীদের আইনের ঊর্ধ্বে চলাফেরা এবং বিচার প্রক্রিয়ার গতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কারণে প্রথমদিকে মামলা নথিভুক্ত করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।
কী করা উচিত?
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সমাজে সচেতনতা বাড়াতে নারীদের আইনি অধিকার সম্পর্কে জানাতে হবে।
উপসংহার
ঝিনাইদহের এই ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে যে নারী নির্যাতন ও অবিচার রোধে সচেতনতা ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা যায়, এই মামলায় দোষীদের কঠোর শাস্তি হবে এবং ভুক্তভোগী নারী ন্যায়বিচার পাবেন।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ: ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে নৃশংসতার শিকার
#নারী_নির্যাতন #ধর্ষণ #গর্ভপাত #ঝিনাইদহ #আইনের_শাসন