ভুক্তভোগীর ধর্ষণ ও পাচার এর গল্প
নোয়াখালীর এক মেধাবী মাদ্রাসা ছাত্রী (১৭) টেলিগ্রামে এক তরুণের প্রেমের ফাঁদে পড়ে ঢাকায় আসে, শুধুমাত্র বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে। কিন্তু তার পরিণতি হয়েছিল চরম ভয়াবহ। তাকে আবাসিক হোটেলে আটকে রেখে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়, তারপর বিক্রি করে দেওয়া হয় একটি যৌনপল্লিতে। মাসখানেক পর এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাকে উদ্ধার করে। এখন সে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
কীভাবে শুরু হয়েছিল এই ট্র্যাজেডি?
মেয়েটি নোয়াখালী সদরের একটি ফাজিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। টেলিগ্রামে তার পরিচয় হয় সাতক্ষীরার এক তরুণের (২০) সাথে। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিয়ের লোভ দেখিয়ে ওই তরুণ তাকে গত ১৭ মে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। সঙ্গে নেয় মেয়েটির তিন ভরি সোনার গহনা ও নগদ দেড় লাখ টাকা।
হোটেলে আটকে পাশবিক নির্যাতন
ঢাকার যাত্রাবাড়ীর একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে গিয়ে তাকে চেতনানাশক দেওয়া হয়। জ্ঞান ফিরতেই সে দেখে, তার গহনা, টাকা এবং ফোন সবই চুরি হয়ে গেছে। এরপর শুরু হয় নির্মম ধর্ষণ। কথিত প্রেমিক এবং তার বন্ধুরা দিনে ৭-৮ বার তাকে ধর্ষণ করে। প্রায় ২১ দিন এই অত্যাচার চলার পর তাকে একটি দেহব্যবসার চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
কীভাবে উদ্ধার হলো মেয়েটি?
যৌনপল্লিতে আটক থাকা অবস্থায় সে আরেকজন আটক তরুণীর সাহায্যে ফোন পায় এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। তার মা স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় ১৫ জুন তাকে ঢাকার জুরাইন থেকে উদ্ধার করেন। এখন মেয়েটি নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
মামলা ও তদন্তের অবস্থা
মেয়েটির মা সুধারাম মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। থানার ওসি মো. কামরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আসামিরা এখনও ফাঁড়ার বাইরে।
সোশ্যাল মিডিয়ার বিপদ: কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
এই ঘটনা আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ইন্টারনেটে অপরিচিত মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা সহজেই প্রেম বা বন্ধুত্বের নামে শিকার হতে পারে অসাধু চক্রের। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করুন:
অপরিচিত মানুষের সাথে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।
অনলাইনে কাউকে বিশ্বাস করার আগে তার আসল পরিচয় নিশ্চিত করুন।
কখনও অচেনা কাউকে নির্ভরযোগ্য মনে করে একা দেখা করবেন না।
পরিবারের সদস্যদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন, কোনো সমস্যায় লুকাবেন না।
শেষ কথা
এই ঘটনা শুধু একটি মেয়ের ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। ডিজিটাল যুগে অপরাধীরা নতুন নতুন কৌশলে শিকার খুঁজে নিচ্ছে। সচেতনতা এবং দ্রুত আইনি পদক্ষেপই পারে এমন ঘটনা রোধ করতে। আশা করি, ভুক্তভোগী ন্যায় বিচার পাবে এবং অপরাধীরা কঠোর শাস্তি পাবে। তবে এমন ঘটনার পূণরাবৃত্তি যেকোন সময় যে কারও সাথে ঘটতে পারে। ধর্ষণ ও পাচার রোধে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেয়ায় স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে তিনজন মিলে ধর্ষণ