রংপুরের মিঠাপুকুরে এক পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। ঘটনায় প্রতিবেশী ও চাচা মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
একটি নৃশংস ঘটনা আবারও আমাদের সমাজের অন্ধকার দিকটি উন্মোচন করেছে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেধাবী ছাত্রী দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের শিকার হয়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তারই প্রতিবেশী ও চাচা মাসুদ রানা (৪২)কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কীভাবে ঘটনাটি ঘটল?
মামলার এজাহার এবং পরিবারের বয়ানে জানা গেছে, শিশুটি মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ (অটিজম স্পেকট্রামে রয়েছে)। এই সুযোগ নিয়ে মাসুদ রানা গত বছরের ৮ নভেম্বর তাকে চকলেট ও বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে নির্জন আমবাগানে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে। এরপর একাধিকবার তাকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে এই নিষ্ঠুর কাজ চালিয়ে যায়।
সম্প্রতি শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করে তার মা সন্দেহ করেন এবং শনিবার তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসক পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেন যে মেয়েটি পাঁচ মাসের গর্ভবতী।
পরিবারের মর্মান্তিক কান্না
মেয়েটির বাবা একজন দিনমজুর। তিনি বলেন, “আমার মেয়েটা একটু হাবাগোবা টাইপের (অটিস্টিক)। এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মাসুদ আমার মেয়ের সর্বনাশ করে দিয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই।”
মেয়েটির মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। সে এখনও বুঝতেই পারছে না তার জীবনে কী ঘটেছে।
পুলিশের তৎপরতা ও গ্রেপ্তার
ঘটনাটি পুলিশকে জানানোর পর মিঠাপুকুর থানা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। অভিযুক্ত মাসুদ রানাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে।
মিঠাপুকুর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমরা তদন্ত করছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমাজের করণীয়
এই ঘটনা আমাদের সমাজের নারী ও শিশু নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতাকে আবারও উন্মোচন করেছে। প্রতিবেশী বা আত্মীয়রাই যখন শিশুদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন পরিবার ও সমাজকে আরও সতর্ক হতে হবে।
কীভাবে শিশুদের নিরাপদ রাখবেন?
সচেতনতা বৃদ্ধি করুন: শিশুদের ভালো-খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে শিক্ষা দিন।
নির্জন স্থানে সতর্ক থাকুন: শিশুকে একা কোথাও যেতে দেবেন না, বিশেষ করে অপরিচিত বা সন্দেহজনক ব্যক্তির সঙ্গে।
খোলামেলা আলোচনা করুন: শিশুরা যেন কোনো সমস্যায় আপনাকে নির্দ্বিধায় জানাতে পারে, সেই আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
আইনের সুরক্ষা নিন: কোনো অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে দেরি না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিন।
শেষ কথা
এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের সমাজের নোংরা মুখটি আবারও দেখিয়ে দিল। শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি, যাতে আর কোনো শিশু এমন নির্মমতার শিকার না হয়।
আরও পড়ুন: বরিশালে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার মর্মান্তিক ঘটনা: আসামি এখনও পলাতক
আমরা আশা করি, ভুক্তভোগী শিশুটির জন্য দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং সে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে।
#শিশু_নির্যাতন_বন্ধ_করুন #ধর্ষণের_বিচার_চাই #সচেতন_সমাজ_গড়ি