কুমিল্লার লাকসামে এক তরুণী প্রেমিকের খোঁজ করতে গিয়ে নির্মম দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৮ জুন, তবে মামলা দায়ের করা হয়েছে সোমবার (১৬ জুন) রাতে। পুলিশের অভিযানে ইতিমধ্যে তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
ভুক্তভোগী তরুণী (২০) মোবাইল ফোনে রিফাত নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচিত হন। গত ৮ জুন তিনি রিফাতের সঙ্গে দেখা করতে লাকসাম বাজারে যান। সেখানে এক অটোরিকশাচালক এনায়েতুর রহমান সাক্কু (১৯) তার সঙ্গে কথা বলে এবং প্রেমিককে খুঁজতে সহায়তা করার প্রস্তাব দেয়।
তবে, রিফাতকে খুঁজে না পেয়ে তরুণীকে লাকসাম রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছু বখাটে যুবক তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। এনায়েত প্রথমে তরুণীকে তার স্ত্রী বলে পরিচয় দিলেও পরে তাকে বখাটেদের হাতে তুলে দেন।
এরপর একদল যুবক তাকে মারধর করে রেললাইনের পাশের একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে এনায়েতের সহায়তায় সাগর (২৬), স্বপন (২১) ও খোরশেদ নামের আরেক যুবক দলবদ্ধভাবে তরুণীকে ধর্ষণ করে।
পুলিশের তৎপরতা ও গ্রেপ্তার
ঘটনার শিকার তরুণী পরদিন কর্মস্থলে যান এবং পরে পরিবারের সহায়তায় লাকসাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন সুলতানা জানান, ভুক্তভোগীর মামাতো ভাইয়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন:
মো. সাগর (২৬), লাকসামের বড়তোপা গ্রামের বাসিন্দা
এনায়েতুর রহমান সাক্কু (১৯), লাকসাম পৌর এলাকার পেয়ারাপুরের বাসিন্দা
স্বপন মিয়া (২১), কিশোরগঞ্জের পাকন্দিয়া উপজেলার চর-কাউনা গ্রামের বাসিন্দা
অপর আসামি খোরশেদকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি, তবে তাকে আটকাতে তদন্ত চলছে।
চিকিৎসা ও আইনি প্রক্রিয়া
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভুক্তভোগীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয় এবং আদালতে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সমাজে নারী নিরাপত্তার প্রশ্ন
এ ধরনের ঘটনা সমাজে নারী নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। একজন তরুণী কীভাবে সহজেই প্রতারিত হয়ে চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তা ভাবিয়ে তোলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।
সতর্কতা ও সচেতনতা
অপরিচিত কারো সঙ্গে একা দেখা করা থেকে বিরত থাকুন।
পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়া-আসা করুন।
সন্দেহজনক আচরণ দেখলে পুলিশ বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানান।
শেষ কথা
এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের সবার জন্য একটি শিক্ষা। নারী নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে সামাজিক সচেতনতা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ অপরিহার্য। আশা করা যায়, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের হামলা সত্ত্বেও ইরানের পরমাণু স্থাপনা অক্ষত: তেহরানের দাবি