একটি মেয়ের স্বপ্ন, আত্মনির্ভরশীলতা এবং শখকে কীভাবে সমাজের রক্ষণশীলতা ও কুসংস্কারের কাছে বলি হতে হয়—তার মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত হলো রাধিকা যাদবের হত্যাকাণ্ড। মাত্র ২৫ বছর বয়সে নিজ পিতার হাতে প্রাণ হারালেন এই প্রতিভাবান টেনিস খেলোয়াড়। তার অপরাধ? আর্থিক স্বাধীনতা, সামাজিক মিডিয়ায় সক্রিয়তা এবং একটি মিউজিক ভিডিওতে অংশগ্রহণ।
এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি আমাদের সমাজের সেই বিষাক্ত মানসিকতারই প্রতিচ্ছবি, যা নারীদের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে দেখে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁওয়ে বসবাসকারী রাধিকা যাদব ছিলেন একজন জাতীয় পর্যায়ের টেনিস খেলোয়াড়। সম্প্রতি কাঁধের আঘাতের কারণে তিনি খেলা থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন এবং একটি টেনিস অ্যাকাডেমি চালাতেন। পাশাপাশি, একটি মিউজিক ভিডিওতে অংশ নেওয়ায় তার পিতা দীপক যাদবের সঙ্গে তীব্র মতবিরোধ তৈরি হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে দীপক রান্নাঘরে পেছন থেকে রাধিকাকে গুলি করেন। গুরুতর জখম নিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের কাছে দীপক তার অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন, “গ্রামের লোকজন বলত, আমি মেয়ের উপার্জনে চলি। কেউ কেউ তার চরিত্র নিয়েও কুৎসা রটাত।”
কী ছিল রাধিকার ‘অপরাধ’?
১. আর্থিক স্বাধীনতা: রাধিকা নিজের টেনিস অ্যাকাডেমি চালিয়ে আয় করতেন, যা তার পিতার সহ্য হয়নি।
২. সামাজিক মিডিয়ায় সক্রিয়তা: তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ছিলেন, যা রক্ষণশীল সমাজে অনেকেই ‘অনুচিত’ মনে করে।
৩. মিউজিক ভিডিওতে অংশগ্রহণ: একটি মিউজিক ভিডিওতে অংশ নেওয়াকে পিতা ‘পরিবারের সম্মানহানী’ হিসেবে দেখেছেন।
সমাজের কুসংস্কার ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা
রাধিকার মৃত্যু শুধু একটি পরিবারিক হত্যাকাণ্ড নয়, এটি আমাদের সমাজের সেই বিষবৃক্ষের ফল, যেখানে নারীদের স্বাধীনতাকে হুমকি হিসেবে দেখা হয়। আজও অনেক পরিবারে নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা, শিক্ষা বা শখকে ‘অপমান’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
দীপক যাদবের মতো অনেক পিতাই সমাজের কথা শুনে, প্রতিবেশীর কটূক্তির ভয়ে মেয়েদের স্বপ্নকে পিষে দেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কেন একজন নারীর সাফল্য, স্বাধীনতা বা শখকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়?
আইনী পদক্ষেপ ও বিচার
পুলিশ দীপক যাদবকে গ্রেফতার করেছে এবং হত্যার অভিযোগে তদন্ত চলছে। তবে শুধু আইনী শাস্তিই যথেষ্ট নয়, সমাজের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন জরুরি।
শেষ কথা
রাধিকা যাদবের মৃত্যু আমাদের সামনে একটি বড় প্রশ্ন রেখে গেছে—আমরা কবে নারীদের স্বাধীনতাকে সম্মান করতে শিখব? নারী শুধু ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী থাকবে, নাকি সে নিজের পছন্দের জীবন গড়তে পারবে—এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে।
একটি সভ্য সমাজ তখনই গড়ে উঠবে, যখন নারী-পুরুষ সমান অধিকার ও স্বাধীনতা পাবে। রাধিকার মৃত্যু যেন বৃথা না যায়, সেদিকে সবার নজর দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ীতে কলেজের ওয়াশরুমে ধর্ষণের মর্মান্তিক ঘটনা: ছাত্র গ্রেফতার