ফেনী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) জানিয়েছে, মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার চেয়ে ১৩৭ সেন্টিমিটার উপরে উঠে গেছে। এই অস্বাভাবিক ও দ্রুত পানি বৃদ্ধির কারণে আশেপাশের বেশ কিছু এলাকা ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে।
কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো?
বিডব্লিউডিবির ফেনী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, টানা ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় মুহুরী নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এছাড়াও, পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে মুহুরী নদীতে অতিরিক্ত পানি ছাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
ফেনী বিডব্লিউডিবি সূত্রে জানা গেছে, পার্শুয়াম, জঙ্গলঘোনা, গদানগর, ডেরপাড়া এবং সাহেবনগরসহ পাঁচটি স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে। এতে করে আশপাশের গ্রাম ও কৃষিজমি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি
ফেনী জেলা প্রশাসন বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোতে ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজী উপজেলায় ৯৯টি (৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে) এবং পার্শুয়াম উপজেলায় ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে দ্রুত স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।
ফ্ল্যাশ ফ্লাডের আশঙ্কা
ফ্লাড ফোরকাস্টিং অ্যান্ড ওয়ার্নিং সেন্টার (এফএফডব্লিউসি) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মুহুরী নদীর পানি আরও বাড়তে পারে এবং ফেনীতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে অস্বাভাবিক জোয়ারের প্রভাব থাকায় কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা বাড়তে পারে।
গঙ্গা-পদ্মার পানি বাড়ছে, তবে বিপদসীমার নিচে
এফএফডব্লিউসির সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং আগামী পাঁচ দিন এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, এগুলো বিপদসীমার নিচেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের আগস্টের স্মরণীয় বন্যা
গত বছর আগস্ট মাসে ভারী বৃষ্টি এবং ত্রিপুরার বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। সেই বন্যায় ৭০ জনের বেশি প্রাণহানি ঘটে এবং হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
স্থানীয়দের জন্য করণীয়
নদীর পানি আরও বাড়তে পারে, তাই নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখুন।
বন্যায় আক্রান্ত হলে জরুরি নম্বরগুলো হাতের কাছে রাখুন।
ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। নতুন কোনো তথ্য বা সতর্কতা পাওয়া মাত্রই তা জনগণকে জানানো হবে।
আরও পড়ুন: ১৮ বিচারকের বাধ্যতামূলক অবসর: বিস্তারিত জানুন
#ফেনী_বন্যা #মুহুরী_নদী #বাংলাদেশ_বন্যা #FloodAlert #FeniFlood #MuhuriRiver