সমাজে নারী ও শিশু নিরাপত্তা আজও একটি বড় প্রশ্ন। প্রতিদিনই আমরা নারী নির্যাতনের ভয়াবহ ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি। সম্প্রতি ময়মনসিংহে এক কিশোরীর ওপর ঘটে যাওয়া দলবদ্ধ ধর্ষণ এর মর্মান্তিক ঘটনা সমাজের অন্ধকার দিকটিকে আবারও উন্মোচিত করেছে। মাত্র ১৫ বছর বয়সী এক মেয়ে, যে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে পোশাক কারখানায় কাজ করছিল, তাকেই নির্মমভাবে শিকার হতে হলো পাশবিক নির্যাতনের।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার এক দরিদ্র পরিবারের কিশোরীটি (১৫) বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়। সে একটি গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করে মা ও দুই বোনের সংসার চালায়। ১৮ জুন, সকালে তার সন্তানসম্ভবা বোনকে দেখতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে সিএনজি অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিল।
এ সময় চার যুবক তাকে ঘিরে ধরে। তারা তাকে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ফাঁদে ফেলে। শম্ভুগঞ্জ এলাকার একটি পরিত্যক্ত গুদামে নিয়ে গিয়ে দু’জন তাকে ধর্ষণ করে, বাকিরা পাহারা দেয়। নির্মম নির্যাতনের পর তাকে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। লজ্জা, ভয় ও সম্মানহানির যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কিশোরীটি পাটগুদাম সেতু থেকে ব্রহ্মপুত্র নদে ঝাঁপ দেয়। সৌভাগ্যক্রমে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে এবং পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পুলিশের তদন্ত ও গ্রেপ্তার
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। কোতোয়ালি থানার পুলিশ নিজেদের খরচে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। মেয়েটির মা ১৯ জুন চারজন আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত ১৭ বছরের এক কিশোর ও ১৯ বছরের কাইয়ুম নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। বাকি দুই আসামিকে খুঁজছে পুলিশ।
সমাজের করণীয়
এই ঘটনা আমাদের সামনে আবারও প্রশ্ন তুলে ধরেছে—নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কতটা সচেতন? শুধু আইন প্রণয়ন বা শাস্তির বিধান রাখলেই চলবে না, সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
কীভাবে প্রতিরোধ সম্ভব (দলবদ্ধ ধর্ষণ)?
সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা জোরদার করতে হবে।
দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা: ধর্ষণের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা উচিত।
নিরাপদ পরিবেশ তৈরি: নারীদের চলাচলের পথে পর্যাপ্ত আলো ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
মানসিক সহায়তা: নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপসংহার
এই কিশোরীর ঘটনা (দলবদ্ধ ধর্ষণ) শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। নারী নির্যাতন বন্ধ করতে শুধু আইন বা শাস্তিই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে।
আরও পড়ুন: আম খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণ
আপনার মতামত জানান: নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে আপনার কী পরামর্শ? কমেন্টে শেয়ার করুন।