ক্রিকেট বিশ্বে স্টেডিয়ামের গ্যালারি বা স্ট্যান্ডের নামকরণ খেলোয়াড়দের জন্য এক বিশাল সম্মানের বিষয়। কিন্তু সম্প্রতি হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একটি গ্যালারি থেকে সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের নাম সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই ঘটনায় ক্রিকেট অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আজহারউদ্দিন নিজেও এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কী ঘটেছে?
হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এইচসিএ) নর্থ প্যাভিলিয়ন স্ট্যান্ড থেকে আজহারউদ্দিনের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। শনিবার (তারিখ) এইচসিএর নৈতিক কর্মকর্তা ও ন্যায়পাল বিচারপতি ভি. ইশ্বরাইয়া এই রায় দেন। এখন থেকে এই গ্যালারির টিকিটেও আজহারউদ্দিনের নাম থাকবে না।
নাম পরিবর্তনের পেছনের কারণ
গত ফেব্রুয়ারিতে লর্ডস ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষ থেকে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়, যেখানে অভিযোগ করা হয় যে আজহারউদ্দিন হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে নিজের নামে এই স্ট্যান্ডের নামকরণ করেছেন।
এই গ্যালারিটি আগে ভারতের আরেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণের নামে ছিল। আজহারউদ্দিন যখন এইচসিএর সভাপতি ছিলেন, তখন এই নাম পরিবর্তন করা হয়। এ নিয়ে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ ওঠে।
বিচারপতি ইশ্বরাইয়া তাঁর রায়ে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত এইচসিএর সাধারণ সভা দ্বারা অনুমোদিত হয়নি, যা প্রমাণ করে যে আজহারউদ্দিন নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের সুবিধা আদায় করেছেন। এটি স্বার্থের সংঘাতের একটি স্পষ্ট উদাহরণ।”
আজহারউদ্দিনের প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে আজহারউদ্দিন বলেন, “এখানে কোনো স্বার্থের সংঘাত নেই। আমি এই বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ক্রিকেট বিশ্ব এই সিদ্ধান্তে হাসাহাসি করবে। আমি ১৭ বছর ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেছি, এর মধ্যে ১০ বছর অধিনায়কত্ব করেছি। হায়দরাবাদে ক্রিকেটারদের এভাবেই সম্মান দেওয়া হয়? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আদালতে যাব।”
আজহারউদ্দিনের ক্রিকেট ও রাজনৈতিক জীবন
- ১৯৮৫-২০০০ পর্যন্ত ভারতের হয়ে ৯৯ টেস্ট ও ৩৩৪ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন।
- ১৯৯০-এর দশকে ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে ভারত ৩টি বিশ্বকাপে অংশ নেয়।
- ২০০০ সালে ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারির দায়ে আজীবন নিষিদ্ধ হন, যদিও ২০১২ সালে আদালত তাঁকে রেহাই দেয়।
- ক্রিকেট থেকে অবসরের পর রাজনীতিতে যোগ দেন, ২০০৯ সালে কংগ্রেসের টিকিটে লোকসভায় নির্বাচিত হন।
- ২০১৯-২০২২ পর্যন্ত হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জনপ্রিয় প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, আজহারউদ্দিনের অতীত কেলেঙ্কারির কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবার অনেকেই বলছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ক্রিকেটারদের অবদানকে অস্বীকার করার শামিল।
আদালতের কি?
আজহারউদ্দিন আদালতে গেলে এই মামলার রায় কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। যদি আদালত এইচসিএর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে, তাহলে এটি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি বড় precedents তৈরি করবে।
উপসংহার
ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নামকরণ শুধুই একটি সম্মানের বিষয় নয়, এটি খেলোয়াড়দের legacy-র সাথেও জড়িত। আজহারউদ্দিনের নাম সরানোর সিদ্ধান্ত ক্রিকেট অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনা থেকে ক্রিকেট প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার গুরুত্ব আবারও প্রমাণিত হলো।
আরও পড়ুন: ইস্পোর্টস: গেমিং থেকে পেশাদার ক্যারিয়ার – কিভাবে শুরু করবেন?
আপনার মতামত কী? নিচে কমেন্টে জানান, আজহারউদ্দিনের নাম সরানো কি ন্যায্য ছিল নাকি এটি একটি অসম্মানজনক সিদ্ধান্ত?