আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক হুমকি। শুক্রবার (২৭ জুন) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইরান যদি উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র “নিঃসন্দেহে” সামরিক পদক্ষেপ নেবে। এই বক্তব্য ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক স্তরে আলোচনা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
ট্রাম্পের হুমকি ও ইরানের অবস্থান
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এসেছে ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে। গত সপ্তাহে মার্কিন বাহিনী ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বাংকার বাস্টার বোমা হামলা চালায়, যার পর ট্রাম্প দ্রুত যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেন। তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি দাবি করেন, এই হামলায় ইরান তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
অন্যদিকে, ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট করে জানান, তিনি আয়াতুল্লাহ খামেনির গোপন অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিলেন, কিন্তু তাকে টার্গেট করা থেকে বিরত থেকেছেন। এই বিবৃতি ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে।
ইরানের ক্ষয়ক্ষতি: বাস্তবতা কতটা?
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি স্বীকার করেছেন যে সাম্প্রতিক হামলায় দেশের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে “গুরুতর ক্ষতি” হয়েছে। তবে ইরানের সরকারি প্রচার মাধ্যমগুলো এই ক্ষয়ক্ষতিকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যা ইরানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
এই সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিভিন্ন দেশের নেতারা শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়া ও চীন ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকিকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী হিসেবে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে, সৌদি আরব ও ইসরায়েল ট্রাম্পের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে।
ভবিষ্যত কী দাঁড়াচ্ছে?
ট্রাম্পের এই হুমকি ইরানের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। যদি ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখে, তাহলে নতুন করে সংঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আবার, ইরান যদি কূটনৈতিক পথে এগোয়, তাহলে উত্তেজনা কিছুটা কমতে পারে।
আরও পড়ুন: শ্রীনগরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা: ৪ জনের প্রাণহানি, আহত ১৫
উপসংহার
বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক, এবং যেকোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে বড় ধরনের সংঘাতের সূত্রপাত করতে পারে। বিশ্ববাসীর আশা, উভয় পক্ষই সংযম প্রদর্শন করে কূটনৈতিক সমাধানের পথে এগোবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা।