যুক্তরাষ্ট্রে ইরানি নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিবাসন নীতির কঠোর প্রয়োগ বাড়ছে। সম্প্রতি, মার্কিন কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট (ICE) ১৩০ জন ইরানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে একজন সাবেক ইরানি সেনাকর্মীও রয়েছেন। এই ঘটনা ইরান-মার্কিন উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে?
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রিদওয়ার কারিমি নামের এক সাবেক ইরানি সেনাকর্মী উল্লেখযোগ্য। তিনি একটি “বাগদত্তা সঙ্গীর বিশেষ ভিসা” (K-1 ভিসা) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন এবং পরে একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেন। তবে, অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে তার বিয়ের তথ্য সঠিকভাবে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তার ভিসা স্ট্যাটাস ঝুঁকিতে পড়ে এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়াও, বাকি গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগের বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসন বা ভিসা শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। ICE-এর দাবি, কিছু ব্যক্তি অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথেও জড়িত থাকতে পারেন।
ইরান-মার্কিন উত্তেজনার প্রভাব
এই গ্রেপ্তারগুলোর সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। গত ২২ জুন, মার্কিন বিমানবাহিনী ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়, এবং এর ঠিক পরদিনই রিদওয়ার কারিমিকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও ICE দাবি করেছে এটি একটি নিয়মিত অভিবাসন অভিযান, তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতির প্রভাব এখানে থাকতে পারে।
বর্তমানে, ICE-এর হেফাজতে প্রায় ৬৭০ জন ইরানি নাগরিক আটক রয়েছেন, যারা সবাই অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের কারণে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
পরিবার ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
রিদওয়ারের স্ত্রী, মরগান কারিমি, যিনি বর্তমানে গর্ভবতী, নিউজউইক ম্যাগাজিনে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তার স্বামীর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “তিনি কোনো অপরাধ করেননি, শুধু ভিসা নীতির জটিলতার শিকার হয়েছেন।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই ধরপাকড়ের সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়ে অভিবাসন নীতির কঠোর প্রয়োগ নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে টার্গেট করতে পারে, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি
ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করে আসছে। ফক্স নিউজ ও আরটির মতো সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইরান, ভেনিজুয়েলা ও মধ্য আমেরিকার নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিবাসন নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে, যেসব দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ, তাদের নাগরিকরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এই ঘটনার সম্ভাব্য ফলাফল
ইরান-মার্কিন সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
অভিবাসন আইনের কঠোর প্রয়োগ বাড়লে, বৈধ অভিবাসীরাও সমস্যায় পড়তে পারেন।
মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবীরা আদালতে এই গ্রেপ্তারগুলো চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।
সর্বশেষ অবস্থা
বর্তমানে রিদওয়ার কারিমি আলাবামার একটি ICE ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন। তার মুক্তির জন্য আইনি লড়াই চলছে। অন্যদিকে, অন্যান্য গ্রেপ্তারকৃত ইরানি নাগরিকদের ভাগ্য নির্ভর করছে তাদের অভিবাসন মামলার ফলাফলের উপর।
আরও পড়ুন: কমলাপুর রেলস্টেশনে নারী যাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ: রেলকর্মী আটক
মন্তব্য করুন
আপনার কী মনে হয়? এই গ্রেপ্তারগুলি কি ন্যায্য, নাকি রাজনৈতিক প্রতিশোধের অংশ? নিচে কমেন্ট করে জানান।