ক্রিকেট বিশ্বে নতুন এক অধ্যায় যোগ হলো। ফুটবলে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি এবার ইতিহাস গড়েছে ক্রিকেট মাঠে। ২০২৬ সালের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নেবে ইউরোপের এই দলটি। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে অনুষ্ঠিতব্য আসরে দেখা যাবে ইতালিকে, যারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে বিশ্ব ক্রিকেটের মঞ্চে পা রাখতে চলেছে।
ইউরোপিয়ান বাছাইপর্বে ইতালির সাফল্য
ইউরোপিয়ান বাছাইপর্বে ইতালিকে শেষ ম্যাচে শুধু বড় ব্যবধানে হার এড়াতে হচ্ছিল, যাতে নেট রান রেটে পিছিয়ে না পড়ে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৯ উইকেটে হারলেও তারা সেই লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। চার ম্যাচে সমান ৫ পয়েন্ট থাকলেও ইতালির নেট রান রেট ছিল +০.৬১২, অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে থাকা জার্সির নেট রান রেট ছিল +০.৩০৬। এই ব্যবধানই ইতালিকে বিশ্বকাপে যাওয়ার টিকিট এনে দেয়।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের চাপ
শুক্রবার হেগে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে ইতালি। তারা ১৩৪ রান সংগ্রহ করে ৭ উইকেট হারিয়ে। জবাবে নেদারল্যান্ডস ১৬.২ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে জয় পায়। তবে ইতালির জন্য আশার কথা ছিল—নেদারল্যান্ডস যদি ১৪.১ ওভারের মধ্যে ম্যাচ জিতত, তাহলে ইতালি বাদ পড়ত। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় ছিল, এবং আজ্জুরিরা বিশ্বকাপের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
ইউরোপ থেকে দুই দল বিশ্বকাপে
এই বাছাইপর্বে ইউরোপ অঞ্চল থেকে নেদারল্যান্ডস ও ইতালি—দুই দলই ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে। নেদারল্যান্ডস ইতিমধ্যে ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত নাম, কিন্তু ইতালির এই অভিষেক নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন।
ক্রিকেটে ইতালির যাত্রা
ইতালির ক্রিকেট দল মূলত অভিবাসী খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত, যাদের বেশিরভাগই পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বংশোদ্ভূত। তবে সম্প্রতি তারা স্থানীয় খেলোয়াড়দেরও সুযোগ দিচ্ছে, যা দলের উন্নতিতে ভূমিকা রাখছে। ২০১২ সাল থেকে তারা আইসিসির সহযোগী সদস্য এবং ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে।
বিশ্বকাপে ইতালির সম্ভাবনা
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যে কোনো দলই বড় অঘটন ঘটাতে পারে। ইতালি যদি তাদের বোলিং ও ফিল্ডিং শক্তিকে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে তারা বড় দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে স্পিনারদের উপর ভরসা থাকবে তাদের, যারা ইউরোপিয়ান পিচে কার্যকর হতে পারে।
ইতালির এই সাফল্যের তাৎপর্য
ইতালির বিশ্বকাপে উত্তীর্ণ হওয়া শুধু তাদের জন্যই নয়, সমগ্র ইউরোপীয় ক্রিকেটের জন্যও একটি মাইলফলক। এটি প্রমাণ করে যে ক্রিকেট শুধু এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের খেলা নয়—এটি এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। আইসিসির উদ্যোগে অন্যান্য অঞ্চলের দলগুলোর উন্নয়নে এই সাফল্য নতুন প্রেরণা দেবে।
২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য ইতালির প্রস্তুতি
এখন থেকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত ইতালিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে হবে, যাতে তারা বড় দলগুলোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। আইসিসি ও ইউরোপীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের সহায়তায় তারা যদি আরও উন্নতি করতে পারে, তাহলে বিশ্বকাপে তারা কিছু চমক দেখাতে পারে।
ইতালির জন্য সমর্থন বাড়ছে
ইতালিয়ান ক্রিকেট ফেডারেশন এখন ক্রিকেটকে দেশে জনপ্রিয় করতে কাজ করছে। স্কুল ও ক্লাব পর্যায়ে ক্রিকেটের প্রসার ঘটানো হচ্ছে। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইতালির ক্রিকেটে নতুন দর্শক ও স্পনসর আসতে পারে, যা দলের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
ইতালির টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উত্তীর্ণ হওয়া ক্রিকেট ইতিহাসের একটি স্মরণীয় ঘটনা। ফুটবলের পর ক্রিকেটেও আজ্জুরিদের সাফল্য দেখতে পাচ্ছি আমরা। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে তারা কতদূর এগোতে পারে, সেটি এখন দেখার বিষয়। তবে এক—ইতালি ক্রিকেট বিশ্বকে জানান দিয়েছে, তারা আসছে!
আপনার কী মনে হয়? ইতালি বিশ্বকাপে কোন দলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে? কমেন্টে জানান!
#Cricket #T20WorldCup #ItalyCricket #SportsHistory
আরও পড়ুন: Sri Lanka National Cricket Team – ইতিহাস, সাফল্য ও বর্তমান অবস্থা