বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতপার্থক্য। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নিয়ে বিএনপির শর্তের সঙ্গে একমত হতে পারছে না জামায়াত, যা রাজনৈতিক সংলাপকে আরও জটিল করে তুলছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো—কেন জামায়াত বিএনপির প্রস্তাব মানতে নারাজ, এর প্রভাব কী হতে পারে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান অবস্থান কেমন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও বিএনপির শর্ত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হলো—“একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।” এই প্রস্তাবে বিএনপি শর্তসাপেক্ষে সম্মতি দিয়েছে। তাদের শর্ত হলো—
সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য কোনো জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) বা বিশেষ কমিটি গঠন করা যাবে না।
সংবিধানে এ ধরনের কোনো বিধান যুক্ত করা হলে বিএনপি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে।
এই শর্তের মাধ্যমে বিএনপি সরকারি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সরাসরি প্রভাব রাখতে চায় বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
জামায়াত কেন বিএনপির শর্ত মানছে না?
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান স্পষ্ট করেছেন যে, তাদের দল বিএনপির এই শর্তের সঙ্গে একমত নয়। তাদের যুক্তিগুলো হলো—
অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ১০ বছরের মেয়াদসীমার পক্ষে, কিন্তু বিএনপির শর্ত অন্যান্য দলের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে যদি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়ে।
জাতীয় ঐকমত্যের নামে একক শর্ত চাপিয়ে দেওয়া যায় না—এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
জামায়াতের মতে, “এনসিসি বা নিয়োগ কমিটি গঠনের বিষয়টি অন্যান্য দলের সঙ্গেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তাই বিএনপি একা এই শর্ত দিতে পারে না।”
রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে ঐকমত্য ও বিতর্ক
আলোচনায় আরও উঠে এসেছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ধর্মীয় বাক্য সংযোজন নিয়ে বিতর্ক। জামায়াতের দাবি অনুযায়ী—
“আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” সংবিধানের মূলনীতিতে যুক্ত করতে হবে।
অধিকাংশ দল এতে সম্মত হলেও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও কিছু উদারপন্থী দল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
এটি দেখিয়ে দেয় যে, ধর্ম ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনও গভীর বিভক্তি রয়েছে।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দল ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই সভায় অংশ নিয়েছে ৩০টি রাজনৈতিক দল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
বিএনপি
জামায়াতে ইসলামী
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
ইসলামী আন্দোলন
গণসংহতি আন্দোলন
এই বৈঠকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে, বিএনপি-জামায়াত মতবিরোধ সামগ্রিক ঐকমত্য প্রক্রিয়াকে ধীরগতির করে দিতে পারে।
সর্বশেষ অবস্থা: কী হতে যাচ্ছে?
জামায়াত ও অন্যান্য দল ১০ বছরের মেয়াদসীমা সমর্থন করলেও বিএনপির শর্ত মেনে নিচ্ছে না।
সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে এখনও পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য হয়নি।
ঐকমত্য কমিশনকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে—এটাই জামায়াতের প্রত্যাশা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা না হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
উপসংহার
বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক সংস্কার ও সংবিধান সংশোধন একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিএনপি ও জামায়াতের মতপার্থক্য দেখিয়ে দেয় যে, জাতীয় ঐকমত্য অর্জন সহজ নয়। তবে, সকল পক্ষ যদি আলোচনায় আন্তরিক থাকে, তাহলে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান সম্ভব।
আপনার মতামত কী?
আপনি কি মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করা উচিত?
সাংবিধানিক পদে নিয়োগে কি স্বাধীন কমিটি থাকা প্রয়োজন?
আরও পড়ুন: ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য: কী বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট?