ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই সংকটের পটভূমি, বর্তমান পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
ভারতের হামলা ও পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতি
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারত পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, এই হামলায় অন্তত ৮ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এই অভিযান চালিয়েছে এবং পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে।
তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দাবি করেছেন, ভারত বেসামরিক এলাকায় হামলা চালিয়েছে এবং তাদের এই কাজ ‘কাপুরুষোচিত’। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “পাকিস্তান এই হামলার চেয়েও কঠোর জবাব দেবে।”
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া: ‘এটা লজ্জার’
এই ঘটনায় প্রথম প্রতিক্রিয়া জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা লজ্জাজনক। আমরা ওভাল অফিসে এই খবর পেয়েছি। ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই ধরনের হামলা অগ্রহণযোগ্য।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি আশা করি, খুব শিগগিরই এই সংকটের সমাধান হবে।” ট্রাম্পের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করেছে।
জাতিসংঘের উদ্বেগ ও শান্তির আহ্বান
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, “মহাসচিব নিয়ন্ত্রণ রেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছেন।”
জাতিসংঘের বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো বড় ধরনের সংঘাত পুরো বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।”
পাকিস্তানের জবাবি হামলার হুমকি
ভারতের হামলার পর পাকিস্তান ইতিমধ্যেই প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, “আমরা ভারতের এই আগ্রাসনের জবাব দেব।”
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাচ্ছে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পটভূমি
এই উত্তেজনার সূত্রপাত গত ২২ এপ্রিল, যখন ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ৩৬ জন নিহত হয়। ভারত দাবি করে, পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা কী?
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা শান্তির আহ্বান জানালেও কার্যকর কোনো হস্তক্ষেপ এখনো দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয় পক্ষকে সংযত থাকার পরামর্শ দিলেও বাস্তবে কূটনৈতিক সমাধান কতটা সম্ভব, তা এখনো অনিশ্চিত।
শেষ কথা: উত্তেজনা না শান্তি?
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নতুন নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক হামলা ও জবাবি হামলার হুমকি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ট্রাম্পের ‘লজ্জাজনক’ মন্তব্য ও জাতিসংঘের উদ্বেগ সত্ত্বেও উভয় দেশের সামরিক প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই সংকট কূটনৈতিকভাবে নিষ্পত্তি হবে, নাকি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা: কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মঙ্গলবার ঢাকায়
আপনার মতামত জানান:
আপনি কি মনে করেন ভারত-পাকিস্তান সংঘাত শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান সম্ভব? নিচে কমেন্ট করে জানান।