কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত পরিশোধন, বর্জ্য নিষ্কাশন ও দেহের তরল ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু কিডনি সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো কিডনি কী, কিভাবে কাজ করে, কিডনি খারাপ হওয়ার কারণ ও লক্ষণ, এবং কিডনি ভালো রাখার ১০টি কার্যকরী উপায়।
কিডনি কি?
কিডনি আমাদের শরীরের একটি জোড়া অঙ্গ, যা মেরুদণ্ডের দুই পাশে পিঠের নিচের দিকে অবস্থিত। এটি শিমের বীজের আকৃতির এবং প্রায় ১০-১২ সেমি লম্বা। কিডনি মূলত রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি ফিল্ট করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়।
কিডনি কিভাবে কাজ করে?
কিডনির প্রধান কাজগুলো হলো:
রক্ত পরিশোধন: কিডনি প্রতিদিন প্রায় ২০০ লিটার রক্ত ফিল্ট করে এবং বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়।
ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখা: সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়ামের মতো মিনারেলসের ভারসাম্য রক্ষা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: কিডনি রেনিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য: কিডনি ইরিথ্রোপোয়েটিন নামক হরমোন তৈরি করে, যা রক্তে লোহিত কণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে।
অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স: শরীরের pH লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে।
কোন বয়স থেকে কিডনি খারাপ হতে শুরু করে?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিডনির কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে কিডনির কার্যকারিতা প্রতি বছর ১% করে হ্রাস পায়। তবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ধূমপানের কারণে অল্প বয়সেও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ওষুধ বা খাবারের মাধ্যমে কিডনি নষ্ট হয়?
হ্যাঁ, কিছু ওষুধ ও খাবার কিডনির ক্ষতি করতে পারে:
কিডনির ক্ষতি করে এমন ওষুধ:
ব্যথানাশক ওষুধ (ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন)
কিছু অ্যান্টিবায়োটিক
কেমোথেরাপির ওষুধ
অতিরিক্ত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট
কিডনির ক্ষতি করে এমন খাবার:
অতিরিক্ত লবণ
প্রক্রিয়াজাত খাবার
কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংক
রেড মিটের অতিরিক্ত সেবন
একটি কিডনি দিয়ে কি জীবন চলে?
হ্যাঁ, মানুষ একটি কিডনি নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। অনেকেই কিডনি ডোনেট করে একটি কিডনি দিয়েও সুস্থ থাকেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে এবং নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে।
কিডনি খারাপ হলে শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়
প্রস্রাবে পরিবর্তন: প্রস্রাব কম বা বেশি হওয়া, ফেনা হওয়া বা রক্ত যাওয়া।
পায়ে ও চোখের নিচে ফোলাভাব: কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে পানি জমে।
অবসাদ ও দুর্বলতা: রক্তে টক্সিন জমে গেলে ক্লান্তি লাগে।
শ্বাসকষ্ট: ফুসফুসে তরল জমার কারণে।
ত্বকে চুলকানি ও শুষ্কতা: রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমার কারণে।
বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামন্দা: টক্সিনের কারণে পেটের সমস্যা হয়।
কিডনি ভালো রাখার ১০টি উপায়
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: দিনে ৩-৪ লিটার পানি পান করুন।
লবণ কম খান: অতিরিক্ত লবণ কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে।
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: এই দুটি রোগ কিডনির প্রধান শত্রু।
ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: এটি কিডনির রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান: শাকসবজি, ফলমূল ও ফাইবারযুক্ত খাবার খান।
ব্যথানাশক ওষুধ সীমিত ব্যবহার করুন: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত ওষুধ খাবেন না।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
প্রস্রাব চেপে রাখবেন না: এটি কিডনিতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
রক্ত পরীক্ষা করান: বছরে একবার সিরাম ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিন টেস্ট করান।
পর্যাপ্ত ঘুমান: দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম কিডনির সুস্থতার জন্য জরুরি।
উপসংহার
কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা সঠিকভাবে কাজ না করলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত চেকআপ জরুরি। এই ব্লগে দেওয়া টিপসগুলো মেনে চললে আপনি দীর্ঘদিন সুস্থ কিডনি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন।
আপনার কিডনি সুস্থ রাখুন, সুস্থ থাকুন!
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য ভালো রাখার ২৫টি উপকারিতা