নেত্রকোনার মদন উপজেলায় এক নবম শ্রেণির ছাত্রের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা এক কিশোরীকে সালিশের পর জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, কিন্তু ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
ভুক্তভোগী কিশোরীটি মদনের জাওলা গ্রামের বাসিন্দা। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার বাবা দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর মা জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রামে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কিশোরীটি দাদির সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। পাশের বাড়ির নবম শ্রেণির ছাত্র মাহিন মিয়া (অভিযুক্ত) প্রায়ই তাদের বাড়িতে যাতায়াত করত এবং এক পর্যায়ে তাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বারবার ধর্ষণ করে। পরে কিশোরীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে।
সালিশের নামে জোরপূর্বক অপহরণ
ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে সালিশ ডাকা হয়। সেখানে দুই পক্ষের সম্মতিতে মাহিনের সঙ্গে কিশোরীর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সালিশ শেষে মাহিন ও তার সহযোগীরা কিশোরীকে জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি।
কিশোরীর দাদি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “মাহিন আমাদের ঘরে এসে নাতনিকে ধর্ষণ করেছে। পরে জানতে পারি সে গর্ভবতী। সালিশে বিয়ের কথা হলেও তারা তাকে জোর করে নিয়ে গেছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
অভিযুক্তের বাবা আরজু মিয়া দাবি করেন, “আমরা বিয়ের জন্য রাজি ছিলাম, কিন্তু ছেলে-মেয়ে দুজনেই পালিয়ে গেছে। আমরা খুঁজছি।”
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন রুবেল ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুতর আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমরা সালিশে বসেছিলাম, কিন্তু মাহিনের পরিবার অসহযোগিতা করেছে। মেয়েটিকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য। দ্রুত বিচার হওয়া উচিত।”
অন্যদিকে, মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, “এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমাজ ও আইনের দ্বন্দ্ব: কী হবে ন্যায়বিচার?
এই ঘটনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে:
- ধর্ষণের শিকার মেয়েটির নিরাপত্তা কোথায়? সালিশের নামে তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করা হয়েছে, যা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
- সামাজিক বিচার কি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে? ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের শাস্তি কী শুধু বিয়ে?
- পুলিশ ও প্রশাসন কেন প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা নেয়নি? অভিযোগ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা কি যথেষ্ট?
কী করা উচিত?
- ভুক্তভোগী পরিবারকে অবিলম্বে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে হবে।
- মাহিন ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কিশোরীকে উদ্ধার করতে হবে।
- শিশু ও নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
- সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় নেতা, শিক্ষক ও ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে।
শেষ কথা
এই ঘটনা শুধু একটি ধর্ষণের কাহিনী নয়, এটি আমাদের সমাজের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার প্রতি এক ধাক্কা। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির ন্যায্য অধিকার আদায় এবং অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে। নইলে এমন ঘটনা বারবার ঘটবে, আর অসহায় নারীরা পাবে না কোনো ন্যায়বিচার।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় গৃহবধুকে ধর্ষণের পর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ
#নারী_নির্যাতন_বন্ধ_করুন #ধর্ষণের_শাস্তি_চাই #ন্যায়বিচার_চাই