সমাজের অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি করুণ ঘটনা আবারও আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী তারই প্রতিবেশী ও দাদা সমবয়সী এক ব্যক্তির নির্মম ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আরও মর্মান্তিক বিষয় হলো, এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে। এই নিষ্ঠুরতা শুধু একটি মেয়ের জীবনই ধ্বংস করছে না, বরং আমাদের সমাজের নৈতিক অধঃপতনকেও উন্মোচন করছে।
ঘটনার বিবরণ
ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ ইউনিয়নের রায়পটল গ্রামের এক দরিদ্র দিনমজুরের পরিবারের ১৩ বছর বয়সী কিশোরী পার্শ্ববর্তী বাড়িতে কাজ করত। সেই বাড়ির ৬৫ বছর বয়সী ফজলুর রহমান ফজু (দাদা হিসেবে পরিচিত) একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে। অবশেষে মেয়েটি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ঘটনাটি ধীরে ধীরে প্রকাশ পেলে স্থানীয় মাতবররা মামলা না করে “সামাজিক সমাধান” এর নামে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
ধর্ষকের ঔদ্ধত্য ও সমাজের ভূমিকা
ধর্ষক ফজলুর রহমান ঘটনাটি অস্বীকার করে মেয়েটির চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। তার স্ত্রীও অভিযোগ এড়াতে নানা অজুহাত দিচ্ছেন। অন্যদিকে, স্থানীয় প্রভাবশালীরা অর্থ বা জমি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েটির পরিবারকে চাপে রাখছেন।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান হাজীর বক্তব্য আরও হতাশাজনক—”আমরা সামাজিকভাবে ধর্ষকের শাস্তি দেব।” কিন্তু প্রশ্ন হলো, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিচার কি সামাজিক ভাবে সম্ভব? ন্যায়বিচার পেতে হলে কি আইনের আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়?
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও স্থানীয় থানা ঘটনাটি তদন্তে কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখেনি। থানার ওসি দাবি করেছেন, কোনো অভিযোগই তাদের কাছে পৌঁছায়নি। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভুপালী সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি ওসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, এতদিন পরে কেন এই সচেতনতা?
কিশোরীর ভবিষ্যৎ ও সমাধানের পথ
এই মেয়েটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এই শিশুটির জন্য দ্রুত চিকিৎসা, আইনি সহায়তা এবং পুনর্বাসন প্রয়োজন। ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্য কেউ এমন পাশবিক কাজ করার সাহস না পায়।
সমাজের দায়িত্ব
আইনের আশ্রয় নিন: ধর্ষণের মতো অপরাধে সামাজিক সালিশ নয়, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সচেতনতা বৃদ্ধি: শিশু ও নারীদের সুরক্ষায় পরিবার ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
মিডিয়ার ভূমিকা: এমন ঘটনাগুলোকে গণমাধ্যমে তুলে ধরে জনমত গঠন করতে হবে।
উপসংহার
এই ঘটনা শুধু একটি মেয়ের ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। ন্যায়বিচার না পেলে এমন অপরাধ বারবার ঘটবে। আমাদের সচেতনতাই পারে এমন নৃশংসতা রোধ করতে। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলি, যেখানে নারী ও শিশুরা নিষ্কণ্টকে বাঁচতে পারবে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরের সালথায় ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা: সমাজের অন্ধকার দিক