বগুড়ার ধুনটে এক স্নাতক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ জানালেই ঘটলো হৃদয়বিদারক ঘটনা। মা-বাবাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে। স্থানীয় একটি রাজনৈতিক নেতার ছেলে এই হামলার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তকে আটক করেছে এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
শুক্রবার বিকেলে ধুনট উপজেলার একটি গ্রামে এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল মুনছুর আহম্মেদের ছেলে নাফিজ ফয়সাল (আকাশ) দীর্ঘদিন ধরে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। বিষয়টি নিয়ে পরিবারগুলোর মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হলেও নাফিজের উৎপীড়ন বন্ধ হয়নি।
সেদিন বিকেলে নাফিজ তার সহযোগীদের নিয়ে ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে প্রথমে তার মাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। মাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে বাবার উপরও হামলা চালানো হয়। গুরুতর জখম হওয়ায় মা-বাবাকে প্রথমে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে মাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
অভিযুক্তের পরিবারের বক্তব্য
নাফিজ ফয়সালের বাবা আবুল মুনছুর আহম্মেদ ঘটনার ভিন্ন বিবরণ দিয়েছেন। তার দাবি, তার ছেলে ও মেয়েটির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, যা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। তিনি বলেন, “মেয়েটির পরিবারের লোকজন আমার ছেলেকে মারধর করায় এই ঘটনা ঘটেছে।”
তবে ছাত্রীর পরিবার এই দাবি এবং নাফিজের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক উত্ত্যক্তকরণের অভিযোগ দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেছেন।
পুলিশের তৎপরতা
ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্ত নাফিজ ফয়সালকে আটক করেছে। ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল আলম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সহকারী পুলিশ সুপারসহ কর্মকর্তারা। হামলায় ব্যবহৃত একটি চাকু জব্দ করা হয়েছে এবং শীঘ্রই মামলা দায়ের করা হবে।
সমাজে নারীর নিরাপত্তা ও আইনের শাসন
এ ধরনের ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে আঘাত দেয় না, সমগ্র সমাজকে নাড়া দেয়। নারী নির্যাতন ও উত্ত্যক্তকরণের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পরিবার ও সমাজের সচেতনতা বাড়ানো এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
কী করা উচিত?
নারী উত্ত্যক্তকরণের ঘটনাগুলোকে কখনই সাধারণভাবে নেওয়া উচিত নয়।
পরিবার ও স্থানীয় নেতাদের এগিয়ে আসা উচিত সমস্যা সমাধানে।
পুলিশ ও প্রশাসনকে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে অপরাধীরা বিচার এড়াতে না পারে।
এই ঘটনা আমাদের সবার জন্য একটি বড় প্রশ্ন রেখে গেছে—“আমরা কতটা নিরাপদ?” নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: রংপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ: নারী সদস্যের মামলা
আপনার মতামত জানান নিচে কমেন্টে—এ ধরনের ঘটনা রোধে আপনার কী পরামর্শ?