মাগুরার আট বছরের এক শিশুর নির্মম ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড সারাদেশকে স্তম্ভিত করেছে। এই মামলায় আসামিদের নৃশংসতা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা সমাজের অন্ধকার দিককে উন্মোচন করেছে। শনিবার (১৭ মে) এই মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে, যা বাংলাদেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি মাইলফলক হতে পারে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০২৩ সালের ৬ মার্চ, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার এক শিশু তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের পর তাকে ব্লেড দিয়ে আঘাত করা হয়, যা পরবর্তীতে তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাত দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়।
ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা: ‘জিনে ধরেছে’ বলে বিভ্রান্তি
শিশুটির বড় বোনের শাশুড়ি জাহেদা বেগম প্রথমে ঘটনাটি গোপন করতে চেয়েছিলেন। তিনি শিশুটিকে হাসপাতালে না নিয়ে এক হুজুরের কাছে নিয়ে যান এবং দাবি করেন যে শিশুটিকে “জিনে ধরেছে”। তবে হুজুর শিশুটির গলায় কালো দাগ ও বুকে আঁচড়ের চিহ্ন দেখে বুঝতে পারেন যে এটি কোনো অতিপ্রাকৃত ঘটনা নয়। তিনি পরিবারকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
হাসপাতালে নেওয়ার পরও জাহেদা বেগম চিকিৎসক ও নার্সদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, শিশুটির পেটে ব্যথা হয়েছে এবং মাটিতে গড়াগড়ি দেওয়ায় এমন伤痕 হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন যে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং গুরুতর শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।
আসামিদের পরিচয় ও তাদের ভূমিকা
মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখ, যিনি শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। তার স্ত্রী জাহেদা বেগম ঘটনা গোপন করার চেষ্টা করায় তাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও হিটু শেখের দুই ছেলে সজীব ও রাতুল শেখ এবং তাদের মা রোকেয়া বেগমকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
হিটু শেখ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে ডিএনএ পরীক্ষায় তার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করে।
মামলার দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া
এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনার মাত্র দুই মাস ১১ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের ন্যায়বিচার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
৬ মার্চ: শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
১৩ মার্চ: শিশুটির মৃত্যু হয়।
১৪ মার্চ: হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
৮ এপ্রিল: ডিএনএ রিপোর্টে হিটু শেখের দোষ প্রমাণিত হয়।
১৩ এপ্রিল: অভিযোগপত্র দাখিল।
৮ মে: ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
১৭ মে: রায় ঘোষণার তারিখ।
সমাজের জন্য একটি সংকেত
এই মামলা শুধু একটি শিশুর трагеিই নয়, এটি সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্রও তুলে ধরে। একটি শিশুর জীবন নষ্ট করার পরও অপরাধী পরিবার কীভাবে ঘটনা গোপন করতে চেয়েছে, তা ভাবিয়ে তোলে। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
শেষ কথা
মাগুরার এই মামলার রায় শুধু একটি পরিবারকে ন্যায়বিচার দেবে না, বরং এটি একটি বার্তা দেবে যে শিশু নির্যাতনের মতো জঘন্য অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই। আমরা আশা করি, আদালতের রায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাবে।
আরও পড়ুন: মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ
#মাগুরা_শিশু_ধর্ষণ #ন্যায়বিচার #শিশু_সুরক্ষা #StopChildAbuse