সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) জগতে একের পর এক বিপ্লব ঘটে চলেছে। এবার মেটা তাদের প্রথম স্বতন্ত্র এআই অ্যাপ উন্মোচন করে চ্যাটজিপিটির মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামল। এই অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের মেটার জেনারেটিভ এআই মডেলের সঙ্গে সরাসরি ইন্টারঅ্যাক্ট করার সুযোগ দেবে, যা এআই সহকারী হিসেবে ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে।
মেটা এআই: ব্যক্তিগত এআই সহকারী হিসেবে
মেটার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গ ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এই নতুন অ্যাপের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “বর্তমানে আমাদের অ্যাপগুলোতে এক বিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী মেটা এআই ব্যবহার করছেন। তাই আমরা একটি স্বতন্ত্র অ্যাপ তৈরি করেছি, যা ব্যবহারকারীদের জন্য আরও ব্যক্তিগত ও সহজলভ্য হবে।”
এই অ্যাপটি ভয়েস চ্যাটের মাধ্যমে কাজ করবে এবং ব্যবহারকারীর পছন্দ ও আগ্রহ অনুযায়ী রেসপন্স দেবে। জাকারবার্গের মতে, প্রাথমিকভাবে এটি সাধারণ স্তরে কাজ করলেও ধীরে ধীরে এটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য শিখে আরও কাস্টমাইজড অভিজ্ঞতা দেবে।
সোশ্যাল ফিডের সংযোজন
মেটা এআই অ্যাপের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর সোশ্যাল ফিড। ব্যবহারকারীরা এখানে অন্যান্য ইউজারদের তৈরি এআই-জেনারেটেড কন্টেন্ট দেখতে পারবেন। মেটার প্রধান পণ্য কর্মকর্তা ক্রিস কক্স বলেন, “মানুষ একে অপরের কাছ থেকে শেখে, তাই আমরা অ্যাপেই এই ফিচারটি যুক্ত করেছি। ব্যবহারকারীরা তাদের প্রম্পট বা এআই-জেনারেটেড আর্ট শেয়ার করতে পারবেন, যা ইন্টারঅ্যাক্টিভিটিকে বাড়িয়ে তুলবে।”
ভয়েস-ভিত্তিক অভিজ্ঞতা ও বাস্তবসম্মত কথোপকথন
মেটা এআই অ্যাপে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে ভয়েস-ভিত্তিক ইন্টারঅ্যাকশনে। ব্যবহারকারীরা রে-বেন স্মার্ট গ্লাস, মোবাইল অ্যাপ বা ডেস্কটপের মাধ্যমে এই এআইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবেন। এছাড়াও, অ্যাপটিতে একটি এক্সপেরিমেন্টাল মোড রয়েছে, যেখানে এআই মানুষের মতো স্বাভাবিক কথোপকথন করতে পারে—কথার মাঝে বিরতি দেওয়া, হাসি বা বাস্তবসম্মত ডায়ালগের মতো বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমান সীমাবদ্ধতা
যদিও মেটা এআই অ্যাপটি বেশ কিছু উদ্ভাবনী ফিচার নিয়ে এসেছে, তবুও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, এটি বর্তমানে ওয়েব সার্চ করতে পারে না, ফলে রিয়েল-টাইম তথ্য যেমন খেলার স্কোর বা বিশ্বের সর্বশেষ খবর জানার সুযোগ সীমিত। তবে ব্যবহারকারীরা চাইলে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের অ্যাক্টিভিটির ভিত্তিতে এআইকে তাদের সম্পর্কে জানার অনুমতি দিতে পারেন, যা রেসপন্সকে আরও রিলেভেন্ট করে তুলবে।
ওপেন সোর্স এআই মডেলের সুবিধা
মেটা তাদের লামা (Llama) এআই মডেলকে ওপেন সোর্স হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যা ডেভেলপারদের জন্য ব্যাপক সুযোগ তৈরি করেছে। ওপেন সোর্স হওয়ায় যেকোনো ডেভেলপার এই মডেলকে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টমাইজ করতে পারবেন। এটি চ্যাটজিপিটির মতো ক্লোজড সোর্স মডেলের বিপরীতে একটি বড় সুবিধা হিসেবে কাজ করবে।
শেষ কথা
মেটা এআই অ্যাপের মাধ্যমে জেনারেটিভ এআির জগতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ভয়েস-ভিত্তিক ইন্টারঅ্যাকশন, সোশ্যাল ফিড এবং ওপেন সোর্স মডেলের সমন্বয়ে এটি ব্যবহারকারীদের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে পারে। যদিও কিছু ফিচার এখনও ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে, তবুও ভবিষ্যতে এটি এআি সহকারী হিসেবে আরও বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
আরও পড়ুন: অ্যাপলের নতুন এআর চশমা: প্রযুক্তি জগতে যুগান্তকারী সংযোজন
আপনার কী মনে হয়? মেটা এআই কি চ্যাটজিপিটিকে টপকে যেতে পারবে? কমেন্টে আপনার মতামত জানান!