জাতিসংঘের বিশেষ তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয় নিয়ে নতুন করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন। অধিকৃত ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রানচেসকা আলবানিজ একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন, যেখানে গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ও অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে।
এই তালিকায় নাম রয়েছে মাইক্রোসফট, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেড, অ্যামাজন এবং আরও বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানির। মোট ৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে এই সংঘাতে জড়িত থাকার অভিযোগে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
গণহত্যার অর্থনীতি: কারা লাভবান হচ্ছে?
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরাইলের দখলদারি নীতিকে সমর্থন দেওয়া এবং গাজায় চলমান সংঘাতকে টিকিয়ে রাখতে প্রযুক্তি ও অস্ত্র শিল্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ ও সংঘাত শুধু রাজনৈতিক ইস্যু নয়—এটি একটি বিশাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সরাসরি বা পরোক্ষভাবে লাভবান হয়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরাইলের সামরিক বাহিনী যে প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবহার করছে, তার পেছনে রয়েছে আমেরিকা ও ইউরোপের বড় বড় কোম্পানিগুলোর সরবরাহ। বিশেষ করে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রের সরঞ্জাম তৈরি করছে লকহিড মার্টিনের মতো প্রতিষ্ঠান, যা গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ভূমিকা কী?
মাইক্রোসফট, গুগল এবং অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা ক্লাউড কম্পিউটিং, ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে ইসরাইলি বাহিনীকে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, কিছু সফটওয়্যার ও সার্ভিল্যান্স টেকনোলজি সরাসরি সামরিক অপারেশনে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর নজরদারি ও দমন-পীড়নে ব্যবহৃত হতে পারে।
জাতিসংঘের বিশেষ দূতের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ইসরাইলের দখলদারত্বকে সমর্থন করছে না, বরং গণহত্যার অর্থনৈতিক কাঠামোর অংশ হয়ে উঠেছে।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়েছে। অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও বয়কটের ডাক দিয়েছেন। ফিলিস্তিনি সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন, যাতে কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন ইসরাইলের অবৈধ দখলদারিত্ব ও সামরিক অপারেশনে কোনো ধরনের সহায়তা প্রদান থেকে বিরত থাকে।
কী করা উচিত?
এই সংকটে সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হতে পারে?
সচেতনতা বৃদ্ধি: এই ইস্যুতে তথ্য জানা এবং অন্যদের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া।
নৈতিক বিনিয়োগ: যেসব প্রতিষ্ঠান মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত, তাদের থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা।
বয়কট আন্দোলন: সামাজিক চাপ তৈরি করে কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
শেষ কথা
গাজার সংঘাত শুধু একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি একটি নৈতিক প্রশ্ন। বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো যদি মানবিক বিপর্যয়ে ভূমিকা রাখে, তাহলে আমাদেরও তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন একটি বড় প্রমাণ যে, যুদ্ধের পেছনে শুধু সরকার নয়, কর্পোরেট শক্তিও দায়ী।
আরও পড়ুন: ইউটিউবে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আয় কমে যাওয়ার আভাস
আপনার মতামত জানাতে কমেন্টে লিখুন। শেয়ার করে অন্যদেরও জানার সুযোগ করে দিন।