জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদল সোমবার রাতে বরিশালের চরমোনাই পীরের দরবারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংলাপকে এগিয়ে নেওয়া।
কেন চরমোনাই দরবারে এনসিপির সফর?
এনসিপি বর্তমানে দেশব্যাপী “জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচি চালাচ্ছে, যা গত বছরের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিকে ধারণ করে। এই পদযাত্রার অংশ হিসেবে নাহিদ ইসলাম ও তার সহযোগীরা পটুয়াখালী ও বরগুনা অতিক্রম করে বরিশালে পৌঁছান। চরমোনাই দরবারে তাদের আগমনকে নাহিদ ইসলাম একটি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক সংযোগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “চরমোনাই দরবারের দেশজুড়ে আধ্যাত্মিক ও সামাজিক প্রভাব রয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জুলাই আন্দোলনে আমাদের পাশে ছিল, তাই আমরা তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে এসেছি। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে ন্যায়বিচার, সমতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।”
ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক মিলন
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম এনসিপির নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, “আমরা সবসময় জনগণের আন্দোলনের সঙ্গে থাকি। এনসিপির লক্ষ্য ও আমাদের চিন্তাধারা অনেকটা একই রকম—একটি সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গঠন। আমরা একসাথে কাজ করতে প্রস্তুত।”
বিএনপির ঐক্যের প্রস্তাব ও এনসিপির অবস্থান
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের আলোচনা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা আসন ভাগাভাগির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আমাদের লক্ষ্য মৌলিক সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন। যে কোনো দলের সঙ্গে আমরা এই লক্ষ্যে আলোচনা করতে প্রস্তুত, কিন্তু ক্ষমতার লেনদেন আমাদের এজেন্ডা নয়।”
চরমোনাই দরবারে আধ্যাত্মিক সন্ধ্যা
রাজনৈতিক আলোচনা শেষে নাহিদ ইসলাম ও তার দল চরমোনাইয়ের মরহুম পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম ও সৈয়দ এছহাক (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। এ সময় তারা মাদ্রাসা পরিদর্শন করে ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: কী বার্তা দিল এনসিপি?
এনসিপির এই সফরকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। ইসলামী আন্দোলনের মতো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে এনসিপি তাদের ভিত্তি বিস্তার করতে চাইছে। বিশেষ করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ততা একটি বড় বার্তা দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, এনসিপির চরমোনাই সফর শুধু একটি রাজনৈতিক সাক্ষাৎকার নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর ঐক্যের ইঙ্গিত। ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজের সমন্বয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে এই সংলাপ ভবিষ্যতে কী দিকে মোড় নেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন: আলিয়া মাদ্রাসায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু: সময়ের দাবি নাকি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার?
#রাজনীতি #এনসিপি #চরমোনাই #ইসলামীআন্দোলন #বাংলাদেশ