ইসরায়েলি তরুণী মিয়া শেমের জীবন একের পর এক দুঃস্বপ্নের সম্মুখীন হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাসের হামলার সময় তিনি নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হন এবং গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। ৫৫ দিনের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি ভেবেছিলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ সময় পেরিয়ে এসেছেন। কিন্তু তার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায় বাস্তবতা—নিজ বাসাতেই তিনি ধর্ষণের শিকার হন।
হামাসের জিম্মিদশা: মিয়ার আতঙ্কের দিনগুলো
মিয়া শেম ছিলেন ইসরায়েলের সেই দুর্ভাগ্যবান তরুণীদের একজন, যারা হামাসের হামলার শিকার হয়ে গাজায় বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। তার হাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে জোরপূর্বক আটক রাখা হয়। সেখানে তিনি প্রতিদিন ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের ভয়ে কাঁপতেন। কিন্তু কখনোই ধর্ষণের শিকার হননি।
জিম্মিদশা থেকে মুক্তির পর মিয়া ভেবেছিলেন, এখন থেকে তিনি নিরাপদ। কিন্তু তার জীবনের নিষ্ঠুর পরিহাস ছিল এখনো বাকি।
নিজ বাসাতেই ধর্ষণ: নিরাপত্তাহীনতার নতুন অধ্যায়
গত মার্চ মাসে, তেল আবিবের নিজ অ্যাপার্টমেন্টে মিয়া শেম এক ভয়াবহ ঘটনার শিকার হন। তিনি অভিযোগ করেন, এক সুপরিচিত ফিটনেস ট্রেইনার তাকে মাদক দিয়ে অজ্ঞান করেন এবং ধর্ষণ করেন। ঘটনার পর মিয়া সাহস করে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন, যার ফলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।
৩ মে, ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল ১২-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিয়া বলেন, “আমি সারাজীবন ধর্ষণের ভয়ে কাটিয়েছি—হামাসের জিম্মি হওয়ার আগে, জিম্মি থাকাকালীন এবং মুক্ত হওয়ার পরও। কিন্তু আমার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা, আমার নিজের বাসায় এই ঘটনা ঘটবে, তা ভাবিনি।”
একটি সমাজের অন্ধকার দিক: ধর্ষণের শিকার নারীদের লড়াই
মিয়া শেমের ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি সমাজের একটি গভীর সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, বিশেষ করে যুদ্ধপরবর্তী ট্রমায় ভোগা নারীদের প্রতি অবহেলা ও অপরাধ—এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
মিয়া তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, “আমি লুকিয়ে থাকতে চাইনি। সত্য বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ অনেক নারীই এমন পরিস্থিতিতে নীরব থাকেন। কিন্তু নীরবতা অপরাধীদেরই শক্তি জোগায়।”
আইনি প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের দাবি
মিয়ার অভিযোগের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। তবে, ধর্ষণের মামলাগুলোতে প্রমাণ সংগ্রহ ও বিচার প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় অনেক সময় ন্যায়বিচার পেতে নারীদের দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়।
ইসরায়েলের নারী অধিকার সংগঠনগুলো মিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে। এই ঘটনা দেশটিতে নারী নিরাপত্তা ও যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে।
উপসংহার: নীরবতা ভাঙার সময় এসেছে
মিয়া শেমের কাহিনী আমাদের শেখায় যে, যুদ্ধ, সহিংসতা ও অপরাধের শিকার নারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় অনেক সময়ই স্বপ্ন থেকে যায়। তার মতো সাহসী নারীরা যখন মুখ খোলেন, তখন সমাজের অন্ধকার দিকগুলো আলোর মুখ দেখে।
এই ঘটনা শুধু ইসরায়েল নয়, সারা বিশ্বের নারীদের জন্য একটি বার্তা বহন করে—নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানানোই একমাত্র পথ। মিয়ার লড়াই শুধু তার নিজের নয়, সকল নারীর অধিকার ও নিরাপত্তার লড়াই।
আরও পড়ুন: সাভারে বাঁশঝাড়ে অর্ধনগ্ন নারীর মরদেহ: পুলিশের ধারণা ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড
আপনার মতামত জানান: নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? মন্তব্যে শেয়ার করুন।